ঘুড়ির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে পিলোর ঘুড়ি!

Social

মলয় দে, নদীয়া :- নদীয়ার শান্তিপুরের শ্যামল ব্যানার্জি কে অনেকেই নাও চিনে থাকতে পারেন! কিন্তু যারা ঘুড়ি ওড়াতে ভালোবাসেন অন্তত যাদের বাড়ি শান্তিপুরে, তারা নিশ্চয়ই জানেন পিলোর ঘুড়ি!

কয়েকদিন পরেই শুভ রথযাত্রার সূচনা । আর শান্তিপুরে এই রথ যাত্রার উৎসব মানেই একটা অঘোষিত ঘুড়ির মরশুম আকাশ দখলের লড়াই। নদিয়ার শান্তিপুর শহরের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী অনেকের বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাবের ছাদে রথের আগের দিন থেকে বা ভোর রাত থেকে মাইকের লড়াই, তার সাথে আমোদ প্রমোদ ও চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে আট থেকে আশির ঘুড়ির লড়াইও অব্যাহত থাকবে । তবে সাম্প্রতিক করোনার প্রেক্ষাপটে অন্যান্য অনুষ্ঠানের মত এবার ঘুড়ি ওড়ানোর বাহার অন্যান্য বছরের থেকে তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম হবে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে । সাধারণভাবে চারকোনা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি , ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা , ঈগল , ডলফিন , অক্টোপাস , মৌচাক , কামরাঙা , আগুন পাখি , ফিনিক্স, চিল, জেমিনি , চরকি , পাল তোলা জাহাজ প্রভৃতির মত প্রায় এক গুচ্ছ ঘুড়ি টেক্কা দিয়ে ষাটের দশকে শান্তিপুরে উদ্ভব হলো পিলো ঘুড়ির । এই ঘুড়ি শান্তিপুরে তাঁতের শাড়ির মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ।

সাধারণ ভাবে প্রচলিত ধ্যান ধারণার একটু বাইরে একদম ব্যাক্তিগত ঢঙে এক অভিনব ঘুড়ির ঘুড়ির উদ্ভাবন করলেন শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয় নিকটস্থ দাদদে পাড়া অঞ্চলের বাসিন্দা শ্যামল ব্যানার্জী ওরফে পিলো । এই অভিনব ঘুরিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর লেজটা অবিকল মাছের লেজের আকৃতি বিশিষ্ট এবং ঘুড়ির মাথার দিকটা একটু বেশি সূচালো । এছাড়াও এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এক অভিনব ভারসাম্য রক্ষা করে এক ঝাঁক ঘুড়ির মাঝে প্রবল লড়াই এবং আত্ম বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে প্রতিপক্ষের সাথে সম্মুখ সমরে লড়াই এ অগ্রগণ্য ভূমিকা গ্রহণ করে ।

তবে শ্যামল ব্যানার্জির ডাক নাম পিলো , অনেকে আবার পিলে বলেই ডাকতো , আর তার নাম থেকেই তার তৈরি শান্তিপুরে এই বিশেষ ঘুড়ি পিলো ঘুড়ি বা পিলের লেজের ঘুড়ি নামে আজও সুপরিচিত ।

তবে তার সাথে আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে কথোপকথনের সূত্রে জানা গেলো প্রায় নয় বছর তিনি এই পিলো ঘুড়ি নিজের হাতে তৈরি করা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক টা বয়শের ভারে আবার অনেক টা নিজের চোখের সমস্যার জন্য । শান্তিপুরের ঘুড়ি প্রেমী অনেকে মানুষই এখনো তার ঘুরির আদলে ঘুড়ি তৈরি করেন এবং সেগুলোকে বিক্রি করেন , তবে আশ্চর্যের বিষয় এ প্রজন্মের অনেকেই পিলো ঘুড়ি তৈরি করে অথবা কিনে ওড়ান! কিন্তু শ্যামল ব্যানার্জী বা পিলো কে অনেকেই চেনেন না ।
ঘুড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ঘুড়ির কাঠি , অর্থাৎ শলা চাঁচাটাই প্রধান কাজ । আর সেই সমস্ত কাগজ , কাঠি সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তিনি নিজেই ডজনের পর ডজন পিলো ঘুড়ি বানিয়ে ফেলতেন । তবে এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন শান্তিপুরের অপর এক ঘুড়ি নির্মাতা শান্তিপুর শহর অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুর অঞ্চলের বাসিন্দা প্রয়াত সুবল ব্যানার্জী ।

তবে শান্তিপুরে এই পিলো ঘুড়ি কেনার জন্য রথের আগে থেকেই শান্তিপুরের ঘুড়ি প্রেমী মানুষদের প্রচুর আনাগোনা ও আবদার শুরু হতো । কারণ এই ঘুরিতে আছে বিশেষ মজা , যেটা অন্য কারোর ঘুরিতে পাওয়া যেত না বলেই দাবি দীর্ঘদিন ধরে ঘুড়ি ওড়ানো মানুষজনের । অত্যধিক ঘুরির চাহিদা বেড়ে যাবার কারণে ঘুরির সাধারণ মূল্যের থেকেও প্রায় ডবলের বেশি দামে বিক্রি হতে লাগলো পিলো ঘুড়ি । সাথে সাথে মানুষের উচ্ছাশাও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো । শেষে এই ঘুড়ি কেনার জন্য শুরু হলো দরজা ভাঙ্গাভাঙি নানান রকম কাণ্ড কারখানা। তবে বর্তমানে পেশায় হোমিও প্যাথি ডাক্তার ও সংগীত প্রেমী শ্যামল ব্যানার্জী বয়সের ভারে , নিজের কাজের চাপে ও দৃষ্টি শক্তির সমস্যার কারণে এই পিলো ঘুড়ি বানানো বন্ধ করে দিয়েছেন বলেই আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন ।

Leave a Reply