নদীয়ায় জামাই ষষ্ঠীর দিনে জামাই আদরে পূজিত হন রাধারমণ ! সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই প্রথা

Social

মলয় দে, নদীয়া:-আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো আগে অন্তর্ধান হয়ে যান নদীয়া জেলার শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির কুলগুরু রাধারমন জিউ।

বড় গোস্বামী পরিবার সুত্রে জানা যায়, কষ্টি পাথরে তৈরি এই কৃষ্ণমুর্তি এক সময়ে পুজিত হত পুরীতে ‘দোলগোবিন্দ’ নামে। সেই মুর্তিই পরে বাংলার বারো ভুইয়াদের অন্যতম বসন্ত রায় নিয়ে যান যশোরে। মানসিংহের বাংলা আক্রমনের সময়ে তিনি এই বিগ্রহ মথুরেশ গোস্বামীকে রাখতে দেন। পাছে পাঠান সেনারা বিগ্রহ নষ্ট করে দেয় সেই ভয়ে। মথুরেশ গোস্বামী ছিলেন বড় গোস্বামী পরিবারের পূর্বপুরুষ। তিনি সেটি নিয়ে আসেন শান্তিপুরের বাড়িতে। কথিত আছে, সেটাও প্রায় ৪৩০ বছর আগেকার কথা। সেখানেই পুজিত হতে থাকে এই মুর্তি।
এর মধ্যেই ঘটে যায় অঘটন। একদিন পরিবারের সদস্যেরা দেখতে পান মন্দির থেকে উধাও হয়ে গেছে বিগ্রহ। মন্দির থেকে বিগ্রহ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় মাথায় হাত পড়ে সকলের। বিগ্রহ ফিরে পাওয়ার আশায় বড় গোস্বামী পরিবারের সদস্যেরা দেবী কাত্যায়নীর ব্রত শুরু করেন। পরে পরিবারের এক সদস্য স্বপ্নাদেশ পান, শান্তিপুরের অদূরে কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুরের মাঝামাঝি জায়গায় দিগনগরের দিঘীতে পুতে রাখা আছে তাকে। সেখানে গিয়ে খোড়াখুড়ি করে মুর্তির সন্ধান মেলে। নিয়ে এসে ফের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপরে শ্রীমতী অর্থাৎ রাধিকার বিগ্রহ গড়ে উভয়ের যুগল মিলন ঘটানো হয়।

শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়িতে রাধারমনের বিগ্রহের অনেক পরে এসেছেন শ্রীমতি। এই বাড়িরই একটি অংশ শ্রীমতীর বিগ্রহ করেন। এরপরে যুগল মিলন হয়। এরপর থেকে যারা শ্রীমতীর মূর্তি গড়ে দিলেন তারা পরবর্তী সময় থেকেই শুরু করেন রাধারমনের জামাইষষ্ঠী। সেই ধারা মেনেই আজও সেই পরিবার থেকে জামাই ষষ্ঠীতে রাধারমন এবং শ্রীমতীর জন্য তারা পাঠান শাড়ি, ধুতি, ফল, মিষ্টি ইত্যাদি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে তাদেরই একটি অংশ এই শ্রীমতীর বিগ্রহ তৈরি করে দেন। সেই বাড়িতেই তৈরি হয়েছিল আলাদা ঠাকুরের ঘর। প্রতি বছর যেখানে রাধারমন শ্রীমতী জামাইষষ্ঠী এবং অন্যান্য সময়ে যেতেন। সেইঘর এখন ভগ্নপ্রায়! সাবেকি রীতিতে এখনো সেই বাড়ি থেকে কাপড়, ঠাকুরের নানা জিনিস, পাখা, পাচ ফল, মিষ্টি ইত্যাদি পাঠান রাধারমন এবং শ্রীমতীর কাছে। এদিন তাদের পাঠানো নতুন ধুতি, শাড়ি পড়ানো হয় রাধারমন এবং শ্রীমতীকে। এর পাশাপাশি জামাই ষষ্ঠীর দিন বড় গোস্বামী বাড়িতেও রাধারমনের জন্য দেওয়া হয় ভোগ। তাতে থাকে ভাত, সুক্তো, শাক, পোড়ের ভাজা, মোচা, ডাল, পটল পোস্ত, আলুর দম, মিষ্টি, চাটনি, পায়েস, মরসুমি ফল যেমন আম, কাঠাল ইত্যাদি।

Leave a Reply