করোনার জের ! লোনের কিস্তি বাকি, আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বলল মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানির প্রতিনিধি !

Social

মলয় দে, নদীয়া :-বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন পরিবারে লোনের টাকা ঠিকমতো পরিশোধ না হওয়ার জন্য, চরম হেনস্থার শিকার হতে হলো নদীয়ার শান্তিপুরের, পঞ্চাশোর্ধ গৃহ শিক্ষক কে। শুধু তাই নয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাফ জবাব! লোন পরিশোধ না করতে পারলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিন, তাহলে একমাত্র মুক্তি পাবেন।

চরম অবমাননাকর অমানবিক নিদর্শন দেখা গেলো নদীয়ার শান্তিপুর মতিগঞ্জ ঘাট স্ট্রিটের চরজিজিরা এলাকায়।
২০২০ সালের গোড়ার দিকে ইন্ডিয়াবুলস কনজ্যুমার ফিন্যান্স লিমিটেডের কাছে অনলাইনে আবেদনের ভিত্তিতে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন ওই গৃহশিক্ষক। চব্বিশটি কিস্তির মধ্যে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরও কর্মহীন অবস্থায় ঠিকঠাক পরিশোধ করেছেন এগারটি কিস্তি! পরিবারের তরফে জানানো হয় গত এপ্রিল মাসের কিস্তি না দিতে পারার কারণে  তাহেরপুর থানার অন্তর্গত বীরনগর নিবাসী টিংকু কর তার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর ছবি তোলে মোবাইলে। এরপর তা ঋণখেলাপি হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখায়, এমনটাই অভিযোগ করেন গৃহশিক্ষকের স্ত্রী! গৃহশিক্ষকের স্ত্রী সম্মান বাঁচাতে, কিছুক্ষণের মধ্যে পাশাপাশি বাড়ি থেকে বারোশো টাকা জোগাড় করে এনে দেয় তাকে।

অভিযোগকারী সমর ভট্টাচার্য্য জানান এরপর মে মাসের কিস্তির টাকা হিসেবে গতকাল সকাল ১১ টা নাগাদ ফোন করে ওই প্রতিনিধি। প্রথমেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, করতে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানাতে গেলে, তা না শুনেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বলে ঋণদাতা সংস্থার প্রতিনিধি। বিভিন্ন অপমানসূচক কথাবার্তার মধ্যেই ওই ব্যাংক কর্মী আত্মহত্যার বিষয়টি বারংবার বলতে থাকেন! এরপর সুগার এবং হাই প্রেসারে আক্রান্ত ওই গৃহশিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ে, অচৈতন্য অবস্থায় তাকে পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়া হয় শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা বাদে কিছুটা সুস্থ হয়ে, ঘটনা সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে শান্তিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অপরদিকে ঘটনার বিষয় জানতে চেয়ে দু একজন সাংবাদিক ফোন করলে, তাদেরকেও ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য না দিয়ে বিভিন্ন অপমানসূচক কথা বলে ঋণদাতা সংস্থার দু একজন কর্মকর্তা । এমনকি সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে নেমেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশকিছু সহৃদয় ব্যক্তি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দু একটি সংগঠনও ওই পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন। তারাও প্রশ্ন তুলেছেন, ঋণখেলাপি হলে তার আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন, তাই বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা কতটুকু আইনসিদ্ধ!

Leave a Reply