দেবু সিংহ ,মালদা : রাজ্যে কাজ না থাকায় বহু মানুষকে পা বাড়াতে হয় ভিন রাজ্যের উদ্দেশ্যে, কাজের খোঁজে।
সেরকমই কাজের জন্য গিয়েছিল মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানা এলাকার মালীওর গ্রাম পঞ্চায়েতের শামখা গ্রামের যুবক বংশী লাল মন্ডল। হরিয়ানার কাটলা এলাকায় একটি কাঠ চেরাই কলে কাজ করতে গিয়ে আর ফেরেনি, সেখানে রেল লাইন থেকে হয় মৃতদেহ উদ্ধার, রোজগেরে ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে চরম আর্থিক সংকটে এবং দুরাবস্থার সম্মুখীন হতে হয় পরিবারকে, সেই খবর প্রচারিত হয় সংবাদমাধ্যমে | খবরের জেরে পাশে দাড়ালো প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
সুত্রর খবর, মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুরের মালিওর গ্রাম পঞ্চায়েতের শামখা গ্রামের যুবক বংশিলাল মন্ডল হরিয়ানার কাটলা এলাকায় কাঠ চেরাই মিলে কাজ করতো। বেতন নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা চলছিল তার। ঠিকঠাক পারিশ্রমিক না মেলায় বাড়ি চলে আসতে ছেয়েছিল সে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বাড়ি আসে তার মৃত্যুর খবর।
সেখানকার রেললাইন এ তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়।তার বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছিল খুন করা হয়েছে তাকে। প্রশাসনের কাছে সুবিচার চেয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে বাড়ির একমাত্র রোজগারে সদস্য না থাকায় চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয় তাদের সবাইকে ,একদিকে প্রিয়জন হারানোর শোক অন্যদিকে আর্থিক দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হয় । দুর্গতি চরমে উঠলেও পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল না কোনো নেতা বা জনপ্রতিনিধি।তাদের অসহায়তার কথা তুলে ধরা হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে |
সংবাদ মাধ্যমে সেই খবরের জেরে এদিন তাদের পাশে এসে দাড়ায় জনপ্রতিনিধি এবং নেতারা। আজ সেই অসহায় পরিবারের সাথে দেখা করেন হরিশ্চন্দ্রপুরের দাপুটে নেতা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান এবং জেলা পরিষদের শিশু,নারী ও ত্রাণ কর্মাধক্ষ্যা মর্জিনা খাতুন ও হরিশ্চন্দ্রপুর ১নং ব্লক রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান,
জেলা পরিষদের শিশু , নারী ও ত্রাণ কর্মাধক্ষা মর্জিনা খাতুন বলেন ” চাল ডাল জামা কাপড়, শিশুর খাবার দিয়ে পাশে দারাচ্ছি এই পরিবারের। পরিবারের এরকম মর্মান্তিক শোকে আমরা সমব্যথী, খবরের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সব।” ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি।
তৃণমূল এর জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান এদিন সেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং ছেলের মৃত্যুর তদন্ত চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন ” অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম । আপনাদের খবরের মাধ্যমেই জানতে পারি এবং এদের পাশে এসে দাঁড়াই। জেলা স্তরে কথা চলছে এই পরিবার যাতে আবাস যোজনার ঘর পান এবং এই মৃত্যুর তদন্ত শুরু করার। এরকম ভাবেই ভবিষ্যতে খবর দিয়ে আপনারা আমাদের উপকৃত করবেন।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১নং ব্লক রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন ” খবরের জেরে এই পরিবারের দুরবস্থার কথা আমাদের কাছে পৌঁছায় এবং আমরা যথা সাধ্য এনাদের পাশে দাড়াচ্ছি। আমাদের সাথে সভাপতি এবং অন্যান্য জন প্রতিনিধিরা উপস্থিত আমরা এনাদের সব রকম ভাবে সাহায্য করবো। কেনো এই মৃত্যু সে নিয়েও তদন্ত হবে। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে যেই রাজ্যে এই ঘটনা ঘটেছে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ সুপার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।”
প্রয়াত বংশী লালের বাবা মহাবীর মন্ডল বলেন ” সবাই যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাড়ালো তাতে খুব ভালো লগলো, চাল ডাল শাড়ি জামা দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন এবং ছেলের মৃত্যুর তদন্ত হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হইছে।”
কর্মসংস্থানের অভাবে বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা । তার মধ্যে এরকম মর্মান্তিক মৃত্যু সত্যি দুঃখজনক।