মলয় দে, নদীয়া : আজ ২৮ই সেপ্টেম্বর , শান্তিপুর শহর ও নদীয়া জেলার প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত লালমোহন বিধ্যানিধির প্রয়াণ দিবস । ১৮৪৩ সালের ২২শে মার্চ বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত মহিশপুরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ভট্টাচার্য্য বংশের নিষ্ঠাবান তেজস্বী ব্রাহ্মণ এবং সুপ্রসিদ্ধ সংস্কৃত ভাষাবিদ ও পণ্ডিত শ্রী লালমোহন ভট্টাচার্য্য মহাশয় ।
পরবর্তীকালে নিজের পৈতৃক বাড়ি পরিত্যাগ করে নদীয়ার শান্তিপুর শহরের অন্তর্গত ফটক পাড়ায় বঙ্গ বাড়ির অর্ধেকটা অংশ কিনে নিয়ে সেখানে সপরিবারে বসবাস শুরু করেছিলেন পণ্ডিত লালমোহন বিদ্যানিধি মহাশয় ।
বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায় , মাত্র ১৮ বছর বয়সে ” কাব্যনির্ণয়” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করে প্রভূত জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । এই গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন বাংলাভাষা স্বনির্ভর , এই ভাষা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী ও যথেষ্ট শক্তিশালী এবং আত্মমর্যাদা সম্পন্ন । এত অল্প বয়সে বাঙালির আত্মনির্ভরতা সম্পন্ন এই প্রকাশনার জন্য তাকে “বিদ্যানিধি” সম্মানে ভূষিত করেন তত্কালীন কৃষ্ণ নগরের রাজা ।
অন্যদিকে ” সম্মন্ধনির্ণয় ” নামক গ্রন্থটিও তার অনবদ্য সৃষ্টি । বঙ্গদেশের সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি তাৎপর্যপূর্ণ , এখানে পশ্চিমবঙ্গ , অসম , উড়িষ্যা , শ্রীহট্ট, মেঘালয় প্রভৃতি অঞ্চলের জাতিসমূহের ইতিহাস বর্ণিত আছে । এছাড়াও বল্লাল সেনের আমল থেকে শুরু করে বঙ্গদেশের সমাজব্যবস্থার সঠিক রূপরেখা পাওয়া এই গ্রন্থটি থেকে । যদিও বর্তমানে প্রযুক্তির দুনিয়ায় শান্তিপুরের অনেকেই এই বরেণ্য মানুষটির নাম শোনেন নি বা জানেন না , কিন্তু তা সত্বেও বলা যায় তার ব্যাক্তিগত ও সামাজিক জীবনের বহু সদ গুন ও অগাধ বিদ্যায় ভূষিত পণ্ডিত লাল মোহন বিধ্যানিধীর পুণ্য নাম সুধী সমাজে বরণীয় হয়ে রয়েছে ।
বিশেষ সূত্রে খবর ১৯৪৩ সালের ১২ই এপ্রিল তাঁর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছিল , তাঁর অগণিত অগণিত ভক্তবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হুগলি জেলার অন্তর্গত চন্দন নগরের মেয়র ও সাহিত্যিক শ্রী হরিহর শেঠ , তিনিই বিধ্যানিধি র স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রস্তর ফলক উৎসর্গ করেছিলেন ।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে তার মহামূল্যবান গ্রন্থ দুটি সংরক্ষিত আছে ,আবার কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে বাংলা ও সংস্কৃত অনার্সের সিলেবাসেও তাঁর কিছু সংকলন অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে ।
তবে বর্তমানে শান্তিপুর ফটক পাড়ার বাড়িতে তার যে বইপত্র গুলি রয়েছে , সেগুলির অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন , তারা পণ্ডিত লালমোহন বিদ্যানিধী র প্রয়াণ দিবসে সেগুলিকে পুনরায় প্রকাশনার উদ্যোগ নিচ্ছেন বলেই জানাচ্ছেন তাঁরই বংশধর লাল্টু ভট্টাচার্য্য ।