মলয় দে, নদীয়া ;- যে সইতে পারে তার কাছে এসেই হয়তো জমা হয় সকল কষ্ট। বয়স যখন পাঁচ বছর ,মায়ের সাথে বাবার মনোমালিন্যে নিজের সন্তানকেও অস্বীকার করে ছেড়ে গিয়েছিলেন দীপকের বাবা। তার কয়েক বছরের মধ্যেই মায়ের হাত ফসকে হারিয়ে যায় সে। তারপর ট্রেন থেকে আরেক বাস এভাবেই নিরুদ্দেশের দেশে। ধরা পড়ে চাইল্ড লাইনের হাতে, পায়রাডাঙ্গা প্রীতিনগর, লিলুয়া হোম ,চন্দ্রনাথ বসু অনাথ আশ্রম ,করিমপুর প্রায় সব জায়গায় একই ছবি, ছোট্ট শিশুর স্বজন হারানোর ব্যথা ভালোবেসে মেটাতে পারেনি কেউ।
বর্তমানে রানাঘাট ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নবপল্লীতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে দীপক। পাঁপড় বিক্রি করে সারাদিন, সন্ধ্যার পর থেকে টিউশন পড়ায় এভাবেই কোনরকমে পেট চালানোর ব্যবস্থা করে আপাতত। কিন্তু শত অসুবিধা সত্ত্বেও নানান অসামাজিক কাজের হাতছানি দিলেও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করেই, বরং পড়াশোনাটা মন দিয়ে করে গেছে দীপক। সে রানাঘাটের দেবনাথ ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর ছাত্র। আত্মকেন্দ্রিক সমাজে নিজের পরিবারকে দুধে ভাতে রাখার, সুশীল সমাজ হয়তো দীপক কে চেনেন অনেকেই! অনেকে বা চিনবেন খবরের পর।
কিন্তু কেউ তো একজন হলেও আছেন ব্যতিক্রমী চরিত্র! সব কিছু দেখার পরও চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না, ভেতর থেকে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়ে যেতে চাই স্রোতের বিরুদ্ধে ই। এমনই এক সহৃদয় মানুষ রানাঘাটের রাকেশ আলী। গতকাল বখরি ঈদের দিন মনের মধ্যে যা কিছু গ্লানি, লোভ লালসা জন্ম নিয়েছিল মনের অন্তরালে! তা কুরবানী দিয়ে সন্তানসম দীপকের আগামীর সমস্ত দায়ভার তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। এমনকি তার পড়াশোনা এবং সমাজসেবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও নষ্ট হতে দেবেন না তিনি। বরং দীপক কে সাথে নিয়ে আগামীতে মানবিকতার হোম গড়ে তুলবেন, যেখানে দীপকের মতন হারিয়ে যাওয়া আরো অনেক দীপক থাকবে আন্তরিকতা ভালোবাসা দিয়ে তৈরি মানবতার ঘরে ।