বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও নারী পাচার প্রতিরোধে ছাত্র -ছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতা শিবির ‌

Social

অভিজিৎ হাজরা উদয়নারায়নপুর, হাওড়া :-“ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন ” ও উদয়নারায়নপুর মাধবিলতা মহাবিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে একদিনের একটি বিশেষ সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয় বাল্যবিবাহ রোধ ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।

নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ার উদ্দেশ্যে আইনি সচেতনতা বিষয়ক আধিকারিক ও আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনদের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ভাব বিনিময়, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কৌশল এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে এই সচেতনতা শিবির অনুষ্ঠিত হলো।
নতুন প্রজন্মকে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলনে সামিল করার লক্ষ্যে এই সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। ‌ সচেতনতা শিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসন , জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চন্দ্রীমা চক্রবর্তী , চাইল্ড হেল্পলাইন এর হাওড়ার সুপারভাইজার সাইমন টেসলা , উদয়নারায়ণপুর ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার আলোক বিশ্বাস ,” ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন ” – র সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ, উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা মহাবিদ্যালয় এর এন,এস,এস কো – অডিনেটর নূপুর অধিকারী আকাশবাণী – র করেসপন্ডেন্ট শার্বানী শর্মা, পরিবেশ কর্মী ও শিক্ষক রাজদূত সামন্ত পরিবেশ কর্মী সংগীতা গিরি, উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা মহাবিদ্যালয় এর আই,কিউ,এ,সি কো – অর্ডিনেটর শাশ্বতী ব্যানার্জী, উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা মহাবিদ্যালয় এর স্যানিসেটাটজেশন সেল এর কো- অর্ডিনেটর স্নেহাশ্রী সাহা । তাঁরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং একটি তথ্যসমৃদ্ধ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করেন।
সচেতনতা শিবিরটি মাধবীলতা মহাবিদ্যালয় এ বিদ্যাসাগর ও মাধবীলতা – র আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এর মাধ্যমে সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উদয়নারায়নপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, ব্লক চাইল্ড ওয়েলফেয়ার নোডাল অফিসার এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা।
বাল্য বিবাহ রোধ ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই সচেতনতা শিবিরে
কলেজের অধ্যক্ষা দেবলীনা সিং স্বাগত ভাষণে ওয়ার্কশপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরে ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমের তরফে নূপুর অধিকারী বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশনের সম্পাদক জানান, “বর্তমান সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় এখনও নাবালিকা বিবাহের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই সমস্যা রুখতে কলেজ, চাইল্ড লাইন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক সুমন পাল বলেন, “আজকের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতে অন্যান্য স্কুল ও সমাজে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তারা নিজেদের পরিবার ও আশেপাশের সমাজকে বাল্যবিবাহের অন্ধকার থেকে মুক্তির বার্তা দেবে।” নাবালিকার বিবাহ ও মানব পাচার রুখতে সচেতনতা মূলক শিবিরে তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দেওয়া হয় ” নিজেই রুখে দাঁড়াও ” । ‌

এই সচেতনতা শিবিরে প্রত্যেক বক্তাই বলেন, বাল্যবিবাহের কারণ গুলি হল দ্রারিদ্রতা, আর্থিক সমস্যা,পরিবারে অধিক কন্যা সন্তান থাকা, সন্তান -সন্ততিদের ইন্টারনেট এর মাধ্যমে যোগাযোগ-তা থেকে প্রেম – বাড়ির অসম্মতিতে শেষে নাবালক বয়সেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে,অধিক কন্যা সন্তান থাকা পরিবারের অভিভাবকদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নাবালক বয়সেই বিবাহ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিবাহ দেওয়া, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রলোভন দিয়ে নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়া -পরে পাচার করে দেওয়া, আর্থিক সমস্যার কারণে কাজের লোভে নাবালিকাকে অন্যত্র কাজে পাঠানো- সেখান থেকে পাচার করা হয়। বাল্যবিবাহ রোধে আইন প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, যদি কোনো সাবালক ছেলের সহিত নাবালিকার বিবাহ দুই পরিবারের সদস্যদের সম্মতিক্রমে হয় তাহলে সাবালক ঐ সাবালক ছেলেটির জেল, জরিমানা হবে। নাবালিকাকে হোমে রাখা হবে।ঐ বিবাহে সম্মত হওয়া দুই পরিবারের অভিভাবক – অভিভাবিকারা, বিবাহ কাজের সঙ্গে জড়িত ঘটক, রাঁধুনি, নাপিত, পুরোহিত, বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই পরিবারের আত্নীয় স্বজন, নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি প্রত্যেকেই গ্ৰেপ্তার হবে। ওনাদের ও জেল এবং জরিমানা হবে। যদি কোনো নাবালিকা প্রেম ঘটিত কারণে পালিয়ে গিয়ে সাবালক ছেলের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং বিবাহের পর ছেলের বাড়িতেই থাকে তাহলে সেই পরিবারের ছেলেটি, ছেলেটির মা-বাবা , পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গ্ৰেপ্তার করা হবে। তাদের জেল- জরিমানা হবে। সাবালক ছেলেটির জেল ও জরিমানা হবে, নাবালিকাকে হোমে পাঠানো হবে। আজকের এই সচেতনতা শিবিরে উপস্থিত ছাত্র -ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক বক্তাই বলেন, তোমারা যদি জানতে পারো কোনো নাবালিকার বিবাহ দেওয়া হচ্ছে,তাহলে তোমারা নির্ভয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান,বি ডি ও, পুলিশকে জানাতে পারো।না হলে ১০৯৮ এই নাম্বারে ফোন করে জানাতে পারো। তোমাদের কোনো ভয় নেই, তোমাদের পরিচয় সম্পুর্ন গোপন রাখা হবে। আগামী দিনে এই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে, নারী পাচার প্রতিরোধে তোমরা এগিয়ে এসে নতুন সমাজ গঠনে, সমাজের মানুষকে নতুন আলো দেখা ও এবং অন্যান্যদের ও তোমাদের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ কর।এই সমাজ তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেতে চায়,এটা মনে রাখবে।

ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানানো হয়, যাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং পঞ্চায়েত সমিতির সমর্থনে এই ওয়ার্কশপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply