মলয় দে নদীয়া :-গ্রীষ্মকাল মানেই আমের সিজন। গত বছর আমের ফলন অনেকখানি কম থাকলেও এবছর প্রতিটা গাছেই মুকুল এসেছিল প্রায় গাছ ভরে। সেই কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলনও বেশ ভালই হয়েছিল প্রথমদিকে। তবে ইতিমধ্যেই দুটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বেশ ভাল রকমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমের। তবে চাষিরা বলছেন যে পরিমাণ আম এবার ফলন হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে তেমন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে সম্প্রতি আমের হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের রোগ, তেমনটাই জানাচ্ছেন আম চাষিরা।
তাদের কথা অনুযায়ী, মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ায় এবং জল আবহাওয়ার দূষণমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ধরনের রোগ গুলি দেখা যাচ্ছে আম গাছ এবং আমের মধ্যে। তারা জানাচ্ছেন, আম সম্পূর্ণরূপে নিজের আকার ধারণ করার পরে পাকা র ঠিক আগের মুহূর্তে অর্থাৎ যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় ডাসা অবস্থায় আমের বোটার কাছে হয়ে যাচ্ছে কালো ছোপ ছোপ দাগ। চাষীদের অনুমান হয়তো এই রোগ গুলি কোন পতঙ্গবাহিত হলেও হতে পারে। এর ফলে আমের আকার সঠিক ভাবে বাড়ছে না অনেক সময় আম পাকার আগেই পচে যাচ্ছে। এই অদৃশ্য ভয়ের কারণেই চাষিরা ছুটেছে বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে নার্সারিতেও। রোগের জন্য দামি দামি কীটনাশক কিংবা ঔষধ দেওয়াতে সাময়িকভাবে শুরাহা মিললেও সেটি স্থায়ী হয়নি।
আর এর কারণেই চাষীদের মধ্যে আমের ফলন নিয়ে একটি ভয়ভীতি কাজ করছিল বেশ কয়েক বছর ধরে।
তবে সম্প্রতি কাঁচা আমের জ্যাম জেলি ইত্যাদি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ফ্লেভার ব্যবহার বাড়াতে সেগুলি প্রস্তুত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। আর সেই কারণেই পাকা আমের পাশাপাশি কাঁচা আমেরও ব্যাপকভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেই কারণে কৃষকরাও নিস্তার পেয়েছে ওই দুশ্চিন্তার থেকে। তারাও ইতিমধ্যে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করতে শুরু করেছে বর্তমানে সব থেকে বেশি ফলন হওয়া বোম্বাই আম। সাধারণত সিজনের প্রথমেই এই আম রপ্তানি শুরু হয় এরপরে আসবে হিমসাগরের পালা।
কাঁচা অবস্থায় আম বিক্রি করলে আখেরে লাভ হচ্ছে কৃষকদেরই। তার কারণ আম পাকলে পরে কিংবা পাকানোর জন্য দরকার পরে প্রচুর পরিমাণে ঝুড়ি, পাকানোর জন্য কার্বাইট, এবং গাছে পাকা আমের জন্য পশুপাখি এবং মানুষের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাখতে হয় পাহারা আর তাতে যথেষ্ট পরিমাণে গ্যাটের কড়ি খরচ হয় তাদের। তাছাড়াও পাকা আম পরিবহনে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে না হলে সেগুলি পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে তবে কাঁচা আমের ক্ষেত্রে সেই সময়টা অনেকখানি বেশি পাওয়া যায়। সেই কারণে আরতদারদেরও এই কাঁচা আম রপ্তানিতে সুবিধা হয়।
যেমন শান্তিপুরের এই আম এখন রপ্তানি হচ্ছে দিল্লি উড়িষ্যা আরো একাধিক রাজ্যে। এমনকি বর্তমানে দেশের বাইরেও উড়ে যাচ্ছে জেলার এই কাঁচা আম। কাঁচা আম নির্দিষ্টভাবে গাড়ির মধ্যেই সেট করে সেখানে অল্প কিছু পরিমাণে কার্বাইড দিয়ে দিলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পাশাপাশি সেই আম পেকেও যায় ফলে একাধারে দুই দিক থেকে লাভ হয়। তবে বর্তমানে পাকা আমের থেকে কাঁচা আম বিক্রি করেই শান্তি পাচ্ছেন আরতদার থেকে শুরু করে চাষীরাও এমনটাই জানাচ্ছেন তারা।