একা থেকে গৃহস্থলীর সমস্ত কাজ সেরে রেধে বেড়ে বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপক নিলয়, বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে চায় লোকো পাইলট হতে

Social

মলয় দে নদীয়া:-বাবা কর্মসূত্রে থাকে পুণেতে, বাবাকে সাহায্য করতে মা-ও থাকে তার কাছে। একমাত্র সন্তান শান্তিপুরের বাথনাতে পৈত্রিক বাড়িতে একা থেকেই মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল সে। জানা যায় শান্তিপুর বাথনা স্টেশন রোডের কাছে বাড়ি নিলয় বিশ্বাসের। সাত আট বছর আগেই বাবা প্রসেন বিশ্বাস অভাবের কারণে তার মাকে নিয়ে হোটেলের কাজে চলে গিয়েছেন পুনেতে। এরপর সে কিছুদিন শান্তিপুরের এক নম্বর কলোনির মামা বাড়িতে থাকলেও সেখানেও স্বল্প উপার্জনে নিজে বোঝা না হয়ে একাই থাকতে শুরু করে শান্তিপুর বাথনা স্টেশনের কাছে খাবরাডাঙ্গা এলাকায় পৈত্রিক ভিটেতে। তবে মাঝেমধ্যে তার এক মাসি বনগাঁর মাঝের গ্রাম থেকে এসে তার কাছে থাকেন। তবে তারও সংসার থাকার কারণে সময় দিতে পারেন না বেশি বছরে হয়তো বার ছয়েক। সম্পূর্ণ বাড়িতে একাই রান্না থেকে শুরু করে বাড়ি যাবতীয় কাজ করে পড়াশোনা করে নিলয়। আশেপাশে কোন সহপাঠী নেই তার তবে রয়েছে বিপথে চালিত হওয়ার নানান প্রলোভন কিন্তু তাতে বিচলিত না হয়ে নিলয় তার লক্ষ্যে অবিচল হতে হবে লোকো পাইলট।

সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করে সে। তিন বছর ধরে আপাতত একাই থাকছে সে বাড়িতে। মায়ের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও বাবার সাথে কথা হয় না তেমন। তবে বাবা ,ছেলের থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার য খরচ বাবদ সামান্য কিছু পাঠিয়ে থাকেন তার স্বল্প উপার্জন থেকে । তাতেই কোন মতে দিন গুজরান হয় তার।

এবছর নিলয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয় পরিজনেরা। স্কুলের মধ্যে 522 নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে নিলয়। ভূগোল ও ইতিহাসের সব থেকে বেশি পেয়েছে দুটো বিষয়তেই ৮২ করে। এছাড়া অংক ভৌতবিজ্ঞানেও লেটার মার্কস। শুধু ইংরেজিতে একটু কম নম্বর হয়ে গেছে তুলনামূলক। তার ইচ্ছে রয়েছে সাইন্স নিয়ে ভর্তি হওয়ার। ইতিমধ্যেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তার, কষ্ট হলেও তারা সাইন্স নিয়ে পড়াবেন তাদের ছেলেকে। এবং নিজের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে তাকে।
মাসি সন্ধ্যা বিশ্বাস রায় জানায়, কখনো এক বেলার রেধে তিন বেলা খায়, আলু সেদ্ধ ভাত কিংবা শুধু ডাল কখনো চিরে মুড়ি খেয়েই কাটিয়ে দেয় ভাবলে খুব কষ্ট হয় কিন্তু আমার বাপের বাড়ি বনগাঁ। সেখান থেকে নিয়মিত আসা সম্ভব হয় না তাই মাঝেমধ্যে এসে রান্না করে ঘর গুছিয়ে দিয়ে যাই।

নিলয় জানায়, গত তিন বছর ধরে একাই থাকে সে বাড়িতে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাকে যথেষ্টই সাহায্য করেছে পড়াশোনা করতে। তাদের সাহায্যের জন্যই আজকে তার এই সাফল্য এসেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলাভ প্রামাণিক জানান সংগ্রাম করতে করতে সংযমী হয়ে উঠেছে, অর্থের প্রাচুর্য কিংবা বাবা-মার নিয়মিত তত্ত্বাবধান থেকেও অনেকে বিপথে পরিচালিত হয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে নিলয় নিদর্শন এবং সকলের অনুকরণযোগ্য। তবে দারিদ্রতা কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না, বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা তার পাশে আছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিলয় পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

Leave a Reply