মলয় দে নদীয়া:-রেকর্ড তৈরী হয় রেকর্ড ভাঙ্গার জন্যই” কথাটি বেশিরভাগ শোনা গেছে বা যায়, খেলার মাঠে, যদিও এই প্রচলিত কথাটির ব্যবহার সর্বত্রই কমবেশি হয়ে থাকে।
আর এবার নিজের নিপুণ শিল্পকলায় নিজের রেকর্ডকেই নিজে ভেঙ্গে নজির গড়লেন নবদ্বীপের শিল্পী গৌতম সাহ।
সামান্য একটি সরষে দানার ওপরেই মাটি, রং দিয়ে দেবী সরস্বতীর মূর্তী, তৈরী করে ফের একবার নিজের শিল্পকলার নজির সৃষ্টি করলো নদীয়ার নবদ্বীপের এক শিল্পী, তিনি পেশায় একজন অঙ্কন শিক্ষক।
তিনি জানান গত বছরের তিনি ৮ মিলিমিটারের দেবী সরস্বতীর মূর্তী তৈরী করেছিলেন, এবার সেই রেকর্ড ছাপিয়ে একটি সরষে দানার ওপরেই সারে পাঁচ মিলিমিটারের দেবী সরস্বতীর মূর্তী তৈরী করে মা সরস্বতীর প্রতি তার শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। নবদ্বীপ শহরের প্রতাপনগর এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাহা। বয়স যার আনুমানিক ৫৭। পেশায় তিনি একজন অঙ্কন শিক্ষক।জানা যায় তার পিতা ছিলেন আকাশবাণীর গিতিকার ও শিক্ষক, পরিবারে স্ত্রী সন্তান সহ দুই দিদি, তারা আছেন লেখালেখি, সংগীত ও শিক্ষাগতা নিয়ে। এক কথায় শিক্ষা ও শিল্প সত্বায় ঘেরা পরিবার থেকেই উঠে আসা শিক্ষক গৌতম সাহার। জানা যায় গত লকডাউনের সময় থেকে তিনি এই ক্ষুদ্র শিল্প কলা তথা এই সৃষ্টির কাজ শুরু করেন। অতীতে বিভিন্ন সময়ে তিনি কখনো মুগডালের পর, কখনো ধানের ওপর তো কখনো চকের, বা চালের ওপর মাটি রং দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন মা কালী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাপ্রভু সহ বিভিন্ন দেবদেবী ও মনিষীদের মূতী।শুধু তাই নয় তিনি নিজের বাড়িতে নিজের নিপুণ শিল্প কলায় সিমেন্ট দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণ অবয়ব মূর্তী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনিষীদের মূর্তী দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন, যা ছোট খাটো একটা খোলা মিউজিয়ামও বলা যায়। শিল্পী গৌতম বাবু জানান এবার দেবী সরস্বতীর প্রতি তার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের জন্য, গত ১৫ দিন ধরে দিন রাত এক করে এবার ফুটিয়ে তুলেছেন একটি সরষে দানার উপরে সারে পাঁচ মিলিমিটার মা সরস্বতীর মূর্তি।যা তৈরী করতে লেগেছে মাটি, রং। আর তা দিয়েই কার্যত আবারা সকলকে তাক লাগিয়েছেন নবদ্বীপের শিল্পী গৌতম সাহা।আর এবারের তার এই সৃষ্টি দেখতে বাড়িতে হাজির হচ্ছেন অনেকেই। শিল্পী গৌতম সাহা জানান এই কাজ করতে পেরে রীতিমতো আনন্দিত। তিনি আরও বলেন করোনা আবহ থেকে শুরু করলেও এখন এই কাজের প্রতি একটা আসক্ত হয়ে পরেছি,
এই শিল্পচর্চা করে মানসিক অবসাদ থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পেরেছেন বলে জানান শিল্পী গৌতম বাবু ।পরবর্তীতে আরও এই ধরণের কাজ করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলে জানান শিল্পী গৌতম সাহা। কিন্তু বর্তমান সময়ে শুধু মানসিক শান্তিতে কি হয়? শিল্পীর যোগ্য সন্মান বা আর্থিক সাহায্য কি কিছু মেলে? প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা হতাশার সাথেই তিনি বলেন এখনো সেভাবে কোথাও থেকে কিছু মেলেনি, তবে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্মানিত হয়েছি, আর্থিক ভাবে কোন সহায়তা মেলেনি, তিনি আরও বলেন আমি চাই যদি আমার এই কাজ গুলো কোথাও সংগ্রহশালায় জায়গা পায়, বা কোথাও প্রদর্শতি হয়,। পাশাপাশি কেউ যদি এই শিল্প কলা শিখতে চায় তিনি তাও শেখাবেন বলেও জানায়।
শ্রী চৈতন্য দেবের জন্মভূমি নবদ্বীপ ধাম, শিক্ষা -সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান, একদা ” অক্সফোর্ড অফ বেঙ্গল”ও বলা হতো এই শহরকে,আর এই শহরের এক কোনে থাকা এই শিল্পীর সৃষ্টি আর তার আক্ষেপ যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার – এই কথাটাই মনে করিয়ে দিলো। মোটের ওপর শিল্পী গৌতম বাবু তার নিপুণ শিল্প কলায় নিজের মতোন করেই আগামী দিনে আরও নতুন কিছু সৃষ্টি করুক।