নদীয়ার শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির কাত্যায়নী বিসর্জনের সাথে সাথেই সূচনা হয় রাস এবং কালীপুজোর

Social

মলয় দে নদীয়া :-মন্দির থেকে উধাও হওয়া রাধারমনকে ফেরত পেতেই কাত্যায়নী পুজো, শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির প্রায় ৪০০ বছরের এই পুজোয় রয়েছে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বিষয়। সময়টা ‌ষোড়শ শতাব্দী। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাবা রঘুরাম রায়ের রাজত্ব তখন রাঢ় বাংলার এই অঞ্চলে। আধুনা বাংলাদেশের ‌যশোহরের মথুরেশ গোস্বামীর প্রথম পুত্র রাঘবেন্দ্র গোস্বামী থেকেই বড়ো গোস্বামী বাড়ির সৃষ্টি।

এই বাড়িতে আজও নিত্য পূজিত হন অদ্বৈতাচার্যের সেবিত শালগ্রামশিলা এবং আরও অনেক দেবদেবী। বড় গোস্বামী বাড়ির পূর্বপুরুষ মথুরেশ গোস্বামী তাঁর পিতার কাছ থেকে শ্রীশ্রীরাধামদনমোহন, প্রভু সীতানাথ, সীতামাতা ও অচ্যুতানন্দের সেবাভার পেয়েছিলেন। মথুরেশ গোস্বামী বাংলাদেশের যশোহর থেকে এনেছিলেন শ্রীরাধারমণকে এবং সেই বিগ্রহ সেবা পান শান্তিপুরের বড়ো গোস্বামী বাড়িতে। এই রাধারমণ একবার বাড়ির মন্দির থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যান। সেই বিগ্রহ ফিরে পেতেই বাড়ির মহিলারা ব্রত রাখলেন দেবী কাত্যায়নীর। কারণ বৃন্দাবনে গোপীরা যেমন কাত্যায়নীব্রত করে লীলাপুরুষোত্তমকে পেয়েছিলেন ঠিক তাঁদেরও তেমন বিশ্বাস ছিল যে তাঁরাও তাঁদের রাধারমণকে ফিরে পাবেন দেবীর ব্রতপূজা করলে। এবং পুজোর সময় স্বপ্নাদেশে জানতে পারা গেল, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছেন রাধারমণ। তখন বড়ো গোস্বামী বাড়ির সদস্যরা তাঁকে নিয়ে আসেন। যা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে আনুমানিক প্রায় ৪০০ বছর ধরে।

সামনের দিকে দেবীর বড় দুটি হাত এবং পিছনে ছোট ছোট আটটি হাত থাকে এবং একচালার প্রতিমাকে পুজো করা হয়। মায়ের এই হাত গুলিকে এখানে প্রতীকী হিসেব ব্যবহার করা হয়। কাত্যায়নী মা দুর্গার বাহন এখানে শ্বেতবর্ণ সিংহ। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর অবস্থান এখানে অন্যান্য প্রতিমার থেকে আলাদা। এখানে কার্তিকের পাশে রাখা হয় কলাবউকে। দেবী এই গোস্বামী বাড়িতে এই বাড়ির নিজস্ব প্রাচীন পুঁথি অনুযায়ীই পূজিত হন। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত এই বাড়ির মহিলারাই এই পুজোর সমস্ত আয়োজন করেন।

নিয়ম অনুযায়ী মায়ের যখন প্রাণ বিসর্জন হয়ে যায় তখনি মাকে নিরঞ্জিত করা হয়, কারণ প্রাণ বিসর্জনের পরে দেবীকে আর গৃহে রাখার নিয়ম নেই। তাছাড়াও যতক্ষন না কাত্যায়নী মায়ের নিরঞ্জন হচ্ছে ততক্ষন তাদের বাড়ির প্রতিষ্ঠিত দেবতা রাধারমন জিউর ভোগ রান্না হয়না, তাদের বড় গোস্বামী বাড়িতে কোন উনুন জ্বলেনা। দশমীর দিনই শান্তিপুরের রাস উৎসবের সূচনা হয় এবং মা আগমেশ্বরীর পাটে সিঁদুর দান করে কালীপুজোরও শুভ সূচনা হল আজ থেকে।
চিরাচরিতভাবে তিন নম্বর রেলগেট সংলগ্ন বানকে বিসর্জন দেওয়া হয় কাত্যায়নী মাকে। সকলকে মিষ্টিমুখ করানোর ব্যবস্থাও থাকে প্রতিবছর।
পরিবারের সদস্যরা জানালেন গোস্বামী মতে পুজো হওয়ার কারণে এ বছর গতকাল নবমী পূজো হয়ে গেছে আর সেই কারণেই আজ দশমী, তাই বিসর্জন।

Leave a Reply