নদীয়ার কুঞ্জমেলা ! পাড়ার ছেলেরাই বিভিন্ন সাজ পোশাকে অভিনয় করে শ্রীকৃষ্ণের নানান অবতারকাহিনী

Social

মলয় দে নদীয়া:- অন্যান্য বছরের মতোই এই বছরও নন্দ উৎসব ও কুঞ্জমেলা-কে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠল নদিয়ার ফুলিয়ায় উমাপুর এলাকা। এবছর তাদের ৬৫ তম বর্ষ তবে তা এই দেশে। বাংলাদেশে বাংলার ১৩৬৫ সাল থেকে সূচনা।

এই কুঞ্জ পুজোকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বহু মানুষ এই উৎসবে যোগ দেন। বসে মেলা।

তিথি নক্ষত্র মেনে ফাল্গুন মাসের প্রথম রবিবার শুরু হয় এই উৎসব। চলে চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায়, শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ, পুতনা বধ, মনিপারোনা, দধি মন্থন, বস্ত্রহরণ, দুর্গাপূজা, কালী পূজা, জগবন্ধুপূজা, রাসলীলা, মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা – এই ধরনের বিভিন্ন আখ্যান নিয়ে পালা অনুষ্ঠিত হয়। উমাপুরের ছেলেরাই বংশানুক্রমে এইসব পালায় অভিনয় করেন। মহিলা চরিত্রগুলিতেও অভিনয় করেন পুরুষরাই।

১৩৬৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের বরাব ধামে শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ভক্তবৃন্দদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পূজার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। পরবর্তী কালে শ্রীমৎ শশীমোহন বর্ধন এবং শ্রী কুঞ্জমোহন দাস-এর সাহচর্যে নদিয়ার ফুলিয়ার উমাপুর এলাকায় এই উৎসব পালন শুরু হয়। শান্তিপুর, ফুলিয়া-সহ নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দর সমাগম এবং অংশগ্রহণ থাকলেও, মূলত এলাকাবাসীরাই পালা করে এই উৎসবের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

কৃষ্ণ-আখ্যান নির্ভর পালা ছাড়াও এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ কীর্তন। উমাপুরের স্থানীয় এক কীর্তন দল বংশ পরম্পরায় কীর্তন পরিবেশন করেন এই উৎসবে। রাধা কৃষ্ণের মিলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। পরের দুটি দিনে চলে কবিগান এবং বাউল গান। এই উপলক্ষে এলাকার সকলের বাড়িতে থাকে সকলের নিমন্ত্রণ। তবে খাবার-দাবার সব অবশ্যই নিরামিষ হওয়া চাই। অবশ্যই থাকে শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম প্রধান পছন্দের খাবার কচুর শাক এবং মানের ডাল।

দীর্ঘ এক মাস ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বিরতি দেওয়া হয় শুক্রবার। আসলে উমাপুরে যেই সময় এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল, সেই সময়ে সেখানে শুক্রবার করে হাট বসতো। সেই কারণেই বন্ধ রাখথা হতো উৎসব। এখন আর সেই হাট না থাকলেও, ওই দিনটিকেই উৎসবের বিরতি হিসাবে মানা হয়। শুধু নদিয়া নয়, কোচবিহার, এমনকী বাংলাদেশেও এই পূজার প্রচলন রয়েছে।

Leave a Reply