মলয় দে নদীয়া :- রাজ্যের মধ্যে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যতীত নদিয়ায় এই প্রথম কোনো সরকারি হাসপাতালের সাথে মরণোত্তর কর্নিয়া সংগ্রহের ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মৌচুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। আর এই শুভক্ষণে উপস্থিত ছিলেন জেলা উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মুর্শিদাবাদ আই ব্যাংকের ইনচার্জ এবং ডাইরেক্টর ডক্টর অনিল কুমার ঘাটা।
অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় শান্তি পুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতাল সুপার ডক্টর তারক বর্মন সহ এএনএম আশা কর্মী এবং হাসপাতাল স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতিনিধিগণ।
এ প্রসঙ্গে ডক্টর অনিল কুমার বলেন, যদিও কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের সাথে কথা চলছে কিন্তু তবুও নদিয়ায় এই প্রথম। তবে আরো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের আহ্বান জানিয়েছে আমরা আজ রানাঘাট লাইন ক্লাব থেকে এক প্রতিনিধি এসেছেন হয়তো তারাও আগামীতে মরমীর তত্ত্বাবধানে এই মহৎ কাজ শুরু করবেন এরপর কাজের পারদর্শিতায় নিজেরাই স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবেন। তার ফলে জেলার মধ্যে মরমীর সংগ্রহ আরো বাড়বে। যদিও এদিন তিনি সংগঠনের ভূয়ষি প্রশংসা করে বলেন, অত্যন্ত সাবধানতার সাথে এবং হাইজেনিক ভাবে সংগ্রহ করার ফলে উনাদের সংগৃহীত প্রতিটি কর্নিয়াই কাজে লাগে। যদিও এর আগে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ওনাদের নানান রকম সহযোগিতা করতেন কিন্তু তবুও এবার থেকে শান্তিপুর হাসপাতালে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে পরে সেই ব্যক্তির পরিবার তাদের ইচ্ছায় চাইলে স্বেচ্ছায় কর্নিয়া দান করতে পারবেন। এবং প্রাথমিক কাজ হবে হাসপাতালেই।
হাসপাতাল সুপার ডক্টর তারক বর্মন বলেন, ইতিমধ্যেই হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকটি কর্নিয়া সংগ্রহ হয়েছে এ ব্যাপারে সকল স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার নার্স প্রত্যেকের আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আগামী দিনে জেলার মধ্যে সংগ্রহের নজির সৃষ্টি করবে বলে আমার বিশ্বাস।
শান্তিপুর মরমীর সদস্য, তপন মজুমদার একজোড়া কর্নিয়া সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দিতে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সরকারি ভাবে তারা এক হাজার টাকা পেয়ে থাকেন, আয়ের অন্য কোন উৎস না থাকা সংগঠনের পক্ষে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ ব্যাপারেও আজ কথা হয়েছে আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
সংগঠনের সদস্য এবং সংগ্রহকারী সোলেমান ,রঘুনাথরা বলেন তারা সংস্থার মাধ্যমে বেশ কিছু সদস্য অনুশীলন নিয়েছিলেন কিন্তু কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা তৈরি হয় যা আজ আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারি।
প্রসঙ্গত শান্তিপুর মরমী আজও একজোড়া করণীয় সংগ্রহ করে এই সভা চলাকালীন। প্রভা আই কেয়ারের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে তাদের পথ চলা শুরু। তবে ২০২২ সালে অজয় দে আই কালেকশন সেন্টার নাম নিয়ে এককভাবে সংগ্রহের অনুমতি মিলেছে । তারা এ পর্যন্ত ৩৪৮ জোড়া অর্থাৎ প্রায় সাতশোর কাছাকাছি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছে ।
এখনো পর্যন্ত বহু মানুষের স্বেচ্ছায় দান করা কর্নিয়া তারা পৌঁছে দিয়েছেন দৃষ্টিহীন মানুষের কাছে। সেই সমস্ত দৃষ্টি মানুষেরা ফিরে পেয়েছে তাদের চোখের আলো। তবে আজকের এই মৌচুক্তির ফলে তাদের কাজের গতি অনেকটাই বাড়বে বলে আশাবাদী সংগঠন এবং হাসপাতাল উভয় কর্তৃপক্ষই।
গোটা বিশ্বে ৭০ মিলিয়ন এবং আমাদের দেশে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৫ লক্ষ দৃষ্টিহীন রয়েছে যার মধ্যে দশমিক ২৪ শতাংশ শিশু। তাই এ মহৎ উদ্যোগে সাধারণ সচেতন নাগরিককেও অংশগ্রহণের অনুরোধ জানায় সংগঠন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।