১১০ টাকা কেজি দই আর পাঁচ টাকার মিষ্টি! ভাতৃদ্বিতীয়ার সকাল থেকেই দিদি জামাইবাবুদের ভীড় নদীয়ার এই দোকানে

Social

মলয় দে নদীয়া :-রাত পোহালেই ভাইফোঁটা। তাই ভাইদের মঙ্গল কামনায় দিদিদের চিন্তা কত তাড়াতাড়ি কত ভালো দই মিষ্টি সংগ্রহ করা যায়। তাই একদিন আগে থেকেই লম্বা লাইন বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে। অন্যদিকে জামাইবাবুদের পকেটের কথাও মাথায় রাখেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের দিদিরা।

তাই নদীয়ার হবিবপুর কালীনারায়নপুর রানাঘাট কৃষ্ণনগর শান্তিপুর থেকে ফুলিয়ার কালিপুরে আজ সাতসকালেই ব্যাগ হাতে এসে মিষ্টির জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন দিদিরা ।

বিজ্ঞাপনে নয় ,ফুলিয়ার কালীপুরের জয়গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডার বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই সংবাদ শিরোনামে, প্রশংসায় সমালোচনাও।

এখানে ১১০ টাকা কেজি দই সারা বছর, পাঁচ টাকা দামের মিষ্টি অন্তত ১৫ রকম। তবে ৭- ১০-১৫ এমনকি কুড়ি টাকা দামেরও আছে বলে জানাচ্ছেন দোকানের কর্মচারী উজ্জ্বল শিকদার। তিনি বলেন মালিক গনেশ পাল কিছুদিন যাবত শারীরিক অসুস্থ আর সেই কারণে, এবারে ভাইফোঁটা উপলক্ষে ১৮০ কেজি দুধের দই পাতা হয়েছে গতকাল রাতে যা আজ দুপুর মধ্যে শেষ, টক দই এখানে মাত্র ১০০ টাকা। সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়া দু একজন দোকানদার এরকম মন্তব্য করে থাকলেও ক্রেতারা সকলেই জানে তাই এত দূরের পথ গাড়ি ভাড়া দিয়ে আসে।

দোকানের বিজ্ঞাপন দিতে ব্যস্ত দূর দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ক্রেতারা। তারা বলেন সারা বছর বিকালের দিকে খুব বেশি মিষ্টি পাওয়া যায় না কারণ ওনারা টাটকা থানার মিষ্টি রাতে বানান যা দুপুরের মধ্যে শেষ। দই মিষ্টি স্বাদ এক কথায় অপূর্ব। অন্যদিকে একটু বেশি পরিমাণ মিষ্টি কিনতে আসলে বাজারদরের প্রায় অর্ধেক টাকায় মিটে যায়।
শান্তিপুর সূত্রাগড় অঞ্চল থেকে আসা কবিতা দাস, তার দশ ভাইকে ভাইফোঁটা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিনেছেন প্রায় হাজার হাজার খানিক টাকার মিষ্টি। যদিও পুরোটা তার ভাইদের জন্য নয়, কিছুটা কম দামের জন্য বাড়ির জন্যও নিয়েছেন তিনি।

পেশায় শিক্ষক বাসুদেব দালাল জানান, এই পথেই তাকে স্কুলে যেতে হয় তাই মাঝেমধ্যেই তিনি এখান থেকে মিষ্টি কিনে থাকেন টাটকা এবং সুস্বাদু সবচেয়ে বড় কথা কম দামে বলে।
পুতুল সাধুখাঁ ফুলিয়ারই নামকরা এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীর প্রতিবেশী কিন্তু বেশি মিষ্টির প্রয়োজন পড়লে চলে আসেন এই দোকানে। দেবদাস নামে এক ব্যক্তি ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এসেছেন এই দোকান থেকে মিষ্টি নিতে। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে একদিন আগে এসে আজও প্রায় আধঘন্টা বাদে পেয়েছেন মিষ্টি।
দোকান মালিক গণেশ পাল শারীরিকভাবে অসুস্থ, তার একমাত্র ছেলে উত্তম ১০ জন কর্মচারী নিয়ে কোনরকমে সামলাচ্ছেন দোকান। তিনি বলেন তারা কেউই ময়দা সম্প্রদায়ের ভক্ত নয় ,বাবা কাজ করতেন প্রথমে চানাচুর ফ্যাক্টরিতে তারপর করলেন বাড়িতে চায়ের দোকান ব্যবসায় সেভাবে শ্রীবৃদ্ধি না হওয়ার কারণে, অবশেষে ১৮ বছর আগে খুলেছিলেন এই দোকান। সেই থেকে ন্যূনতম লাভে প্রচুর পরিমাণে দই মিষ্টি বিক্রি নিত্য নৈমিত্তিক। বাবার কাছে ক্রেতাই ভগবান, তাই অন্যান্য মিষ্টি দোকানদারদের নানান সমালোচনার মুখেও কোনদিন মাথা নেওয়ান নি। ক্রেতারাই তাদের বিজ্ঞাপনদাতা। ১০০ কেজি দুধের দই, ৭০-৮০ কেজি ছানার মিষ্টি বিক্রি হয় প্রতিদিন, পাইকারি নিয়ে যান অনেকেই । তবে খুচরো বিক্রি করেই দোকানের সুনাম হয়েছে তাই তাদের অধিকার সকলের আগে।

Leave a Reply