মলয় দে নদীয়া :-শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ননীদাই ভরসা। নদীয়ার শান্তিপুর বাগদিয়া বাজার বেলেডাঙ্গা মোড়ে গেটবিহীন বিপদজনক রেল পারাপারের এমনই হয়ে আসছে দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বর্তমানে ১২ নম্বরে পরিচিত। ঠিক তারই পাশে ওই এলাকার বাসিন্দা ননীগোপাল দেবনাথের ছোট্ট একটি ভাঙাচোরা চায়ের দোকান। আগে অবশ্য ন্যারোগেজের ট্রেন চলাচল করতো, তারপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে ব্রডগেজ শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগরের একমাত্র ট্রেন পথ। করোনার আগে পর্যন্ত অবশ্য মোট চারটি ট্রেন যাওয়া আসা করতো সকাল দশটার মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে সকালের দিকে শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর ৮.৪৯ নাগাদ যায়, ফিরে আসে ৯.৪৫ এ। দিনের মধ্যে এই একবারই যাওয়া এবং আসার ব্যবস্থা রয়েছে বর্তমানে। রেল লাইনের একেবারে পাশে তার চায়ের দোকান হওয়ার কারণে, একদিকে যেমন রেললাইনের কিছুটা কম্পন অনুভব করেন তেমনই দু কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে ট্রেন ঢোকার আগে যখন হর্ন দেয়, তখন ননী বাবুর কানে সকলের আগে পৌঁছায়। চায়ের খরিদ্দার ফেলে রেখেই, মরিয়া হয়ে ছোটেন , খোলা লেভেল ক্রসিং এর বিয়ে পারাপার হওয়া পথ চলতেই যানবাহন স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের রক্ষা করতে। এলাকাবাসীরা বলেন এমন দিন থাকে যখন অঝোরে বৃষ্টি, কখনো ছাতা মাথায় দিয়ে কখনো বা বৃষ্টিতে ভিজেই ননী বাবু কর্তব্যে অনঢ়। তবে এ সবই আদৌ কি আন্তরিক নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো উদ্দেশ্য ।
ননী বাবুর সাফ কথা, বয়স হয়ে গেছে যেখানে পথ চলতি হাজার হাজার সাধারণ মানুষ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায় একটি গেট নির্মাণ হচ্ছে না, সেখানে চাকরি বা অন্য কোনো সুবিধা তিনি আশা করেন না। বরং কৃতজ্ঞ রেলের জায়গার উপর চা দোকান করে পরিবারের মুখে দুটো খাবার তুলে দিতে পারছেন তার জন্য। তবে তিনি, সকলের জন্য সুরক্ষার দাবি করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলেন, রেলের সময়সীমা পরিবর্তিত হলে প্রথম দিনটা তিনি জানতে পারেন না।, দুশ্চিন্তা একটাই সেদিন যদি কিছু ঘটে যায়। তবে এরপর থেকে তা আবারও অভ্যাসে পরিণত হয়।
এলাকাবাসী এবং পথ চলতি সকলেই একবাক্যে ননীবাবুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা বলেন যেখানে এক মিনিট সময় কেউ কারোর জন্য ব্যয় করে না সেখানে এত বছর ধরে ননী বাবুর এই আত্মত্যাগ সত্যিই প্রশংসা যোগ্য। জাতীয় সড়কের একেবারে পাশ থেকে, বাদকুল্লা গামী এই রাস্তাটি সোজা নদীয়ার শেষ সীমান্ত ফতেপুর বাংলাদেশ বর্ডার পর্যন্ত যাওয়া যায়। এই রাস্তা ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীদের যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছিলো। তবে আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল।