মলয় দে নদীয়া :-কাজী নজরুল ইসলামের ঝাকরা চুলের তালগাছ কিম্বা রবীন্দ্রনাথের তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে কবিতাটি ছোটবেলায় কমবেশি আমরা সকলেই পড়েছি। তবে সেই তালগাছ খুব একটা বেশি আর দেখা যায় না এমনকি সেই কবিতার লাইনও খুব বেশি ছেলে মেয়েদের মুখে শোনা যায় না।
ভাদ্র মাস মানেই তালের মাস। তালগাছ এমনই একটি গাছ যার সম্পূর্ণটাই আমাদের কাজে ব্যবহার হয়। তাল গাছের পাতা দিয়ে আগে তৈরি করা হতো ঘরের ছাউনি এবং হাতপাখা। এমনকি তাল পাতায় লেখাপড়ার কাজও চলতো। এছাড়াও কচিতাল অর্থাৎ তাল গাছের কচি তাল কেটে তার থেকে শ্বাস বের করে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাদ্য যা গরমকালের শরীরের খুবই উপকারী হিসেবে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
এছাড়াও তাল গাছ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে। আগেকার দিনে বেশিরভাগ জমিতেই দেখা যেত জমিতে একাধিক তালগাছ লাগানো রয়েছে। এর প্রধান কারণ গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে কৃষকরা যখন জমিতে খোলা মাঠে চাষ করতে যান তখন অনেক সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। এই তালগাছ জমিতে লাগানোর ফলে অনেক সময় জমির উপরে সরাসরি বজ্রপাত না হয়ে তালগাছের উপরে বজ্রপাত হয় এবং তার ফলে জমিতে থাকা গবাদি পশু থেকে শুরু করে মানুষ জনেরা বজ্রপাতের আঘাত থেকে রক্ষা পেতেন। তবে এখন আর সেই অর্থে দেখা যায় না তাল গাছের সারি।
সেই কারণেই জালাল খালি উত্তরণ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে জালাল খালি বাজার থেকে নিত্যানন্দপুর হয়ে দুর্গাপুর যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে ১৫০০ টি তালের আঁটি রোপণ করা হল। বিভিন্ন জায়গায় চারাগাছ বিতরণ থেকে শুরু করে চারা গাছ রোপন তাদের উদ্যোগে গ্রহন করা হয়েছে এর আগে। তবে তালের আঁটি এই প্রথম।
এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, “এই তালসারি যদি আমরা সুন্দরভাবে রোপন করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্যায়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনই আমাদের এলাকার মানুষজন বজ্র বিদ্যুতের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তার কারণ তালগাছ বজ্রপাত থেকে আমাদের রক্ষা করে এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। তালগাছ জীব বৈচিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আজ বিলুপ্তির পথে সেই কারণেই আমাদের এই উদ্যোগ”।
প্রসঙ্গত তাল গাছ বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এ বছর তালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জন্মাষ্টমীর সময়।
যদিও ফল বিক্রেতাদের একাংশ মনে করছেন জন্মাষ্টমী এ বছর বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়ার কারণেই তালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জন্মাষ্টমীর দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে এক একটি তাল। তাই বাধ্য হয়েই অনেক মধ্যবিত্ত ক্রেতারাই নিরাশ হয়ে তাল না কিনে মিষ্টির দোকানের তালের বড়ার জন্যে লাইন দিয়েছিলেন।
বৃন্দাবন সহ তালগাছের ধর্মীয় গুরুত্বও অপারিসীম। তবে তালের বাগান আর খুব বেশি চোখে পড়ে না এখন। তাই সাহিত্য ধর্মীয় ইতিহাস বিজ্ঞান এবং বাস্তুতন্ত্রে সমতা আনতে সংগঠনের অভিনব এই উদ্যোগে খুশি সকলেই।
ছবি: প্রতীকি