মলয় দে নদীয়া :-পরিবার কুম্ভকার সম্প্রদায়ভুক্ত নয়, এমনকি আশেপাশে ঠাকুর বানানোর কারখানাও নেই, ছোটবেলায় কেউ কখনো তার মধ্যে শিল্পচেতনা গড়ে তুলেছে এমনও নয়,অথচ আজ নদীয়ার শান্তিপুর চড়কতলা মুসলিম স্কুলের মাঠের পাশের জগন্নাথ সফল মৃৎ শিল্পী। তার তৈরি ঠাকুর বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে-বিদেশে পৌঁছাচ্ছে। বাবা রাম প্রামানিক পেশায় তাঁত শ্রমিক, মাও বাড়িতে সুতো পাকিয়ে, ইংরেজি বিভাগে স্নাতক করেছে একমাত্র সন্তানকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী চাকরির কোনো সম্ভাবনা এক প্রকার নেই জেনেই, গৃহ শিক্ষকতা শুরু করে জগন্নাথ।
তবে ছোটবেলা থেকে শিল্পবোধ ছিল তার মধ্যে। শিল্পের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক তার ছোটবেলা থেকেই। মায়ের কথায় , তার মাথা আটা দিয়ে হোক বা বাড়ির উঠোনের কাদা ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব সুন্দর বিষয়বস্তু উপস্থাপিত করতো জগন্নাথ। মাঝেমধ্যে পুতুল মূর্তি এ ধরনের নানা কিছু।
জগন্নাথ জানায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে প্রথম একটি মূর্তি প্রস্তুতির অর্ডার পায় সে। এভাবেই ভার্চুয়াল জগতে তার পরিচিতি বৃদ্ধি হয়েছে শিল্প নিপুণতায়। মূলত স্বরস্বতী অন্নপূর্ণা জগদ্ধাত্রী এবং দুর্গা প্রতিমা প্রতিবছরে ই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সহ রাজ্যের বাইরেও পৌঁছায়।
এবারে তার তৈরি এই দুর্গা প্রতিমা যাচ্ছে কলকাতার ঠাকুরপুকুর, যা আজ থেকে ৬ মাস আগে অর্ডার পেয়েছিলো সে। তবে লাগাতার সময় দিতে না পারলেও টিউশন পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে প্রায় প্রতিদিন অল্প বিস্তার সময় দিয়ে ছ মাস বাদে সম্পূর্ণ হয়েছে প্রতিমা। অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় বাকি রয়েছে আরো তিনটি প্রতিমা যার মধ্যে দুটি কলকাতায় গেলেও একটি যাবে ব্যাঙ্গালোরে।
তবে , পরিবারের নতুন সদস্য স্ত্রী আসার পরে জগন্নাথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাড়ির ছোট্ট বারান্দাটাই আগামীর ওয়ার্কশপ গড়ে তোলা। প্রথমের দিকে সে কোন সহযোগিতা না পেলেও, পরবর্তীতে দুজনের সহযোগিতা তাকে অনেকটাই অনুপ্রাণিত করেছে বলে জানিয়েছে জগন্নাথ। তবে এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী আরও অনেক ছেলেমেয়েদের নিয়ে সে গড়ে তুলতে চায় ওয়ার্কশপ যেখানে, সে আবারো প্রমাণ করতে পারে কুম্ভকার সম্প্রদায়ভুক্ত না হয়েও শিল্পের প্রতি আগ্রহ থাকলেই হওয়া যায় শিল্পী, তা প্রমাণ করার জন্য।