হাসপাতালে জন্মদিন পালন ও রক্তদান শিবির করে ঐতিহাসিক নজির গড়লেন নবদ্বীপের দম্পতি

Social

মলয় দে নদিয়া :- সচারাচর আমরা দেখি জন্মদিন পালন হয় নিজ বাড়িতে বা কোনো এক দামী অনুষ্ঠান হল ভাড়া নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। কিন্তু প্রতিবছর অনারম্ভরপূর্ণভাবে এবং সামাজিক কাজকর্মের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন খুব একটা চোখে পরে না। এমনই এক জন্মদিন পালন করলেন নবদ্বীপের এক দম্পতি। হ্যাঁ নবদ্বীপের মোসুমী দেবনাথ এবং প্রতাপ চন্দ্র দাস প্রতি বছরের মতো এবারও ছেলের জন্মদিন পালন করলো স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে।

এই দম্পতি নবদ্বীপের এক অতি পরিচিত মুখ। দুজনেই বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের কর্মী। নবদ্বীপের মতো এক ধর্মীয় স্থানে “নাস্তিক ভিলা” নামক তাঁর বাড়িটিও সর্বজন পরিচিত। এই দম্পতির ছেলে নাম অনীশ সংকল্প, যার পদবী নেই। যদিও তাঁদের ছেলের পদবী না রাখা নিয়ে সারা রাজ্যব্যাপী হইচই পড়ে গিয়েছিলো। সেই পদবীহীন অনীশ সংকল্পের ১৪ ই জুন ছিলো তৃতীয় জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি আরও একটি বিশেষ কারনে তাৎপর্যপূর্ণ। গতকাল ছিল বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ছেলের জন্মদিন এবং বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে মৌসুমী এবং প্রতাপ নবদ্বীপ ব্লাড ব্যাংকের সহযোগিতায় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চত্ত্বরেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। প্রায় ৩৫ জন রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। তার মধ্যে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সঞ্জয় মন্ডল নামে এক ব্যক্তি রক্ত দান করে প্রমাণ করলেন যে শুধুমাত্র সদিচ্ছা থাকলেই রক্ত দান করা সম্ভব।

জন্মদিনের কেক কেটে রক্তদান শিবিরের সূচনা হয়। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের পরিচালনায় “ওখানে ফেলো না” শিরোনামে একটি সচেতনমূলক নাটকও করা হয়। সাথে ছিলো বাংলার বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী দীপক চক্তবর্তী এবং কাকলী চক্রবর্তীর কণ্ঠে মানবতাবাদী গান। এছাড়াও সকলের মধ্যে চারগাছ এবং ‘কিশোর বিজ্ঞান ও কুসংস্কার’ পুস্তিকা বিতরণ করা হয়। তাঁরা রক্তদান শিবিরে আগত সকলের মধ্যে গাছ বিতরণের করে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেন। মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন পুস্তিকা বিতরণের মধ্য দিয়ে। জন সচেতনমূলক পোস্টারের মধ্য দিয়ে সকলের জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার এবং বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার দাবি জানান। হাসপাতালে ধূমপান, হাসপাতালের সামনে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি বন্ধ এবং প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথাও বলেন এই দম্পতি। তাঁদের এই ব্যতিক্রমী এবং অভিনব প্রচেষ্টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নবদ্বীপবাসী খুব খুশি।

মৌসুমী এবং প্রতাপ জানান, “গ্রীষ্মের এই দাবদাহে বিশেষ করে মে-জুন মাসে রক্তের সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করে। গরমে অনেকেই রক্ত দান করতে চায় না। মুমূর্ষু রোগীর কথা ভেবে এবং রক্তের সঙ্কট মেটাতে আমরা প্রতি বছর ছেলের জন্মদিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করি।”

শুধু এখানেই থেমে নেই নবদ্বীপের এই দম্পতির চিন্তা ভাবনা। মৌসুমী এবং প্রতাপ বর্তমান দেশের সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নক্কারজনক ঘটনা নিয়েও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলেন, “বালেশ্বর রেল দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। কুস্তিগিরদের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অমানবিক আচরণের তীব্র বিরোধিতা করছি।”

আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। সেই উপলক্ষে নবদ্বীপের এই বিজ্ঞান ও মানবতাবাদীকর্মীদ্বয় সকল রক্তদাতা বন্ধুকে তাঁদের ভালোবাসা ও আন্তরিক শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।

Leave a Reply