দু-পাঁচ টাকা কেজি আম ! কাজের ফাঁকে গৃহিণীরা বানাচ্ছেন আমসত্ত্ব

Social

মলয় দে নদীয়া :-লম্বা ইনিংস চলছে গ্রীষ্মের। নদীয়ায় ১৭ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে এখনো পর্যন্ত। উষ্ণতার পারদ রেকর্ড ছুঁয়েছে চল্লিশে। মৌসম ভবন বলছে এখনই মৌসুমী বায়ুর আগমন নয়, একইভাবে গ্রীষ্মকালীন সাজা সমাপ্ত হতে বাকি আরো দুটো সপ্তাহ!

গরমের জন্য, সরকারি তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা ,খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সর্তকতা বার্তা নিত্য অহরহ। প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে বলছেন চিকিৎসকাও। সকাল ১১ টার পর থেকেই মূলত রাস্তাঘাট জনশূণ্য।
তবে, লন্ড্রি, সুতো ডাই, কাপড় মাড় দেওয়া, কোনো ক্ষেত্রে কৃষক রাও খুশি এই রোদ পেয়ে।
তবে সবচেয়ে চওড়া হাসি গ্রাম বাংলার গৃহিণীদের মুখে। এবছর আমের ফলন বেশি হওয়ার কারণে বাগানের গাছ তলায় পড়ে রয়েছে আম। বাজারে দু পাঁচ টাকায় বিকোচ্ছে! কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ কেজির ঝুড়ি মাত্র ৫০ টাকায় পাইকারি। তবে তা শহুরে গৃহিণীদের জন্য। গ্রামের ক্ষেত্রে এর ওর বাগান থেকে কোড়ানো আমে আমসত্ত্ব বানানোর নেশায় ধরেছে তাদের। সকাল বেলা রান্নাবান্না ঘর কন্যার কাজ সেরে, দুপুরের খাবার জোগাড়ের আগে প্রতিবেশী গৃহিণীদের সাথে

মিলেমিশে আমসত্ত্ব দেওয়া নেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের কথায় বাড়িতে অতিথি এলে অথবা দূরে কোথাও অতিথি বাড়ি গেলে আমসত্ত্ব নিয়ে গেলে খুশি হন তারা। কাঁচা আমের আমশি, পরবর্তীতে আমচুর আম মাখা আচার অবশেষে আমসত্ত্ব। নদীয়ার শান্তিপুর বাবলা পঞ্চায়েত, বাগআঁচড়া সহ বেশ কিছু এলাকায় আমবাগান অধ্যুষিত হওয়ার কারণে এ দৃশ্য ঘরে ঘরে। তবে তাদের, আমসত্ত্ব সংরক্ষণের পদ্ধতিটাও ঘরোয়া। প্রতিদিন অল্প অল্প করে আম গুলে স্তরিভূত করে মোটা পুরু হয়ে গেলে, দিন দুয়েক চড়া রোদে শুকানো। তারপর সরষের তেল মাখিয়ে কাপড়ে মুড়ে রেখে দিলে থাকে বহুদিন। তবে রোদে দেওয়ার সময় হনুমান বা অন্য পশু পাখির উপদ্রব সামলাতে হয় প্রখর রোদের মাঝেই।
তবে তারা এবছর খুশি, অন্যান্য বছর মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কারণে, ছত্রাক সংক্রামন হয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে নষ্ট হয় আমসত্ত্ব, রং হয়ে যায় কালো, এবারে তা টুকটুকে ঘনলাল। তবে বাজারে যে আমসত্ত্ব পাওয়া যায় তা সোনালী রঙের সুন্দর দেখতে হলেও মূলত কেমিক্যাল এবং আমের ফ্লেভার দিয়ে পেঁপে বা কুমড়োও ব্যবহার করা হয়। তাতে আমের স্বাদ কৃত্রিম এবং ক্ষতিকারকও । কিন্তু গ্রাম বাংলায় তৈরি এই আমসত্ত্ব, দীর্ঘ ৭-৮ মাস এমনকি এক বছর বাদেও স্বাদ এবং গুণগতমান থাকে অক্ষুন্ন। তবে এখনো পর্যন্ত কুটির শিল্প হিসেবে ঘরে ঘরে এই পেশায় মহিলারা নিযুক্ত হয়ে ওঠেন নি, আগামীতে হয়তো ডালের বড়ির মতন আমসত্বেও গৃহিণীরা লক্ষ্মী লাভ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে দরকার সরকারি সহযোগিতা, এবং তত্ত্বাবধান। বিশেষ করে মহিলা গোষ্ঠীর মাধ্যমে, হয়ে উঠতে পারে মহিলাদের উপার্জনের বিকল্প পথও ।

Leave a Reply