মলয় দে নদীয়া :-আজ বাংলা নতুন বছরের পয়লা বৈশাখ। প্রত্যেক বাঙালির আবেগ, তবে এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির আবেগ উচ্ছ্বাস মানেই খাওয়া দাওয়া, যার মধ্যে দই মিষ্টি অন্যতম। ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যতই চিনি ছাড়া চা হোক না কেন, নতুন বছরে মিষ্টি খাবেনা তা আবার হয় নাকি! এরপর চলতি ৪০ ডিগ্রি উষ্ণতার প্রতিষেধক হিসেবে দই চা… ই চাই। সে টক দই হোক বা সাদা দই কিংবা লাল!
কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে, মিষ্টি ১০ টাকার উপরে, দইও দেড়শ পার করেছে, বহুদিন আগে। তাই পকেটের কথা ভেবে, আপনাকে আসতেই হবে নদীয়ার ফুলিয়া বয়রা কালিপুরের জয়গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারে।
লাল হোক বা সাদা দাম মাত্র একশদশ টাকা, মিষ্টি পাঁচ টাকা থেকে দশ টাকার মধ্যে অন্তত 30 রকমের ভ্যারাইটি। মিহিদানা সীতাভোগ বটফল বোঁদে লাড্ডু সবই বাজারদর থেকে কম।
বিজ্ঞাপন নয়, রাত এগারোটা পর্যন্ত ক্রেতাদের ভীড়, তবে দই না পেয়ে শুধু মিষ্টি নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাদের। আরো একবার সকালে আসতে হবে দইয়ের জন্য। কারণ, প্রতিদিন এক থেকে দেড় কুইন্টাল দুধের দই খুচরো বেঁচেই শেষ হয় বিকালের মধ্যে, পরের দিন আবার নতুন দই। তবে পয়লা বৈশাখে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে দু কুইন্টাল দুধের দই পেতেছেন তারা।
দোকান মালিক গনেশ পাল পেশায় ময়রা নন, কুমোরপাল ছিলেন অর্থাৎ মৃৎশিল্পী। তবে সে পেশায়, বাপ ঠাকুর দাদা পূর্বপুরুষ করলেও তার ভালো লাগেনি, চানাচুরের ফ্যাক্টরিতে কাজ করা, চপের দোকান চালানো কিছুতেই গণেশের কৃপা পড়েনি, গনেশ পালের প্রতি। এরপর ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বাড়ি হওয়ার সুবাদে, একজন মিষ্টি বানানো কারিগর নিযুক্ত করে, সুকৌশলে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ শিখে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ক্রেতাই যে ভগবান তা বুঝেছিলেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে খরিদ্দার টানার জন্য নয়, ১৭ বছর ধরে সামান্য লাভে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রেখেছেন তিনি, তাদের মুখের প্রশংসায় দোকানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না সকাল থেকে।
নিন্দুকেরা অবশ্য, কেউ ভেজাল কেউবা ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ব্যবসা সম্পর্কে ছড়ান নানান গুজব। ব্যবসায়ী মহল থেকেও মাঝেমধ্যেই আসে চাপ। তবে এতে গণেশ বাবুর থোড়াই কেয়ার। তিনি বলেন ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে কোনো সংগঠন পাশে এসে দাঁড়াবে না, তাই ক্রেতা সন্তুষ্ট করাই ব্যবসার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিশ্বজিৎ সরকার নরেশ বিশ্বাসদের মতন ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দূর দুরান্ত থেকে দু দশ কিলোমিটার অতিক্রান্ত করে প্রখর এই রোদ্রের মধ্যে বহু মানুষ দই মিষ্টি নিতে আসে এই দোকান থেকে।
বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠান থাকলেও অনেক সাশ্রয় হয় এই দোকানে।
গণেশ বাবুর ছেলে উত্তম পাল, বলেন লাল দই স্বাদ ভালো, খরচও বেশি হয় একটু, তবে তাদের দোকানে একই দাম। চিনি জ্বালানি দুধের দাম যাই হোক, বাবার ইচ্ছামত দই মিষ্টির দাম বাড়ানো চলবে না। দীর্ঘ এক বছর বাদে গত অগ্রহায়ণ মাসে 10 টাকা বাড়ানো হয়েছিলো। এর আগে দই ছিলো ১০০ টাকা কেজি।
মুখে না বললেও মালিক গণেশ বাবুর কথায় স্পষ্ট , ধার তো নয়ই পাইকারি চাহিয়াও লজ্জা দিবেন না, কারণ সেখানে দাম কমানোর অভ্যাসে গুণগত মান খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তার থেকে খুচরা দামে পাইকারি যদি কেউ নিতে চান তবুও তিনি সন্তুষ্ট হন না, ঝোলা হাতে খুচরো দই মিষ্টি বিক্রি করেই তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।