মলয়, নদীয়া:- নদীয়া শান্তিপুর থানার ফুলিয়া বয়রা কবি কৃত্তিবাস স্মৃতি বিজড়িত এলাকা । যা দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন বহুদূরান্তের ধর্মীয় ইতিহাস এবং সাহিত্যপ্রেমী মানুষজন। সংলগ্ন লাইব্রেরীতে সুরক্ষিত রয়েছে , সে সময়কার নানান পুঁথি পান্ডুলিপি সংক্রান্ত কবির নানান জীবন শৈলীর নিদর্শন। রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করা কবি কৃত্তিবাস ওঝার এই সংগ্রহশালায় বহুদূরান্ত থেকে গবেষণামূলক পড়াশোনার সুবিধার্থে একসময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পর্যটকদের জন্য খুলে রাখার। কিন্তু প্রায়শই অভিযোগ উঠে আসে, তারা নিরাশ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময়।
কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১১১ টি লাইব্রেরীতে প্রয়োজন ২৫২ জন কর্মী তার মধ্যে মাত্র ৪৮ জন মিলে চালাচ্ছে সমস্ত লাইব্রেরী। যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৬ টি লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃত্তিবাস লাইব্রেরীর ক্ষেত্রে তিনজন স্থায়ী সরকারি কর্মী অবসর হওয়ার পর নতুন করে আর নিযুক্ত করা হয়নি কাউকে। অন্য লাইব্রেরি থেকে ছুটির দিন দেখে আসা দুজনে মিলেই সামলান লাইব্রেরী । তার মধ্যে একজন সরকারি অনুমতি ক্রমেই পড়াশোনা করতে যান কলকাতায়। অন্যজনের ক্ষেত্রে সারা সপ্তাহ সামলানো সম্ভবপর নয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক মাসের বুধবার এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ মঙ্গলবার বন্ধ রাখার কথা কিন্তু পর্যটকদের অভিযোগে, প্রায় সারা মাসই বন্ধ থাকে এই লাইব্রেরী।
যেমন আজ শনিবার খোলা থাকার কথা হলেও ফিরে গেলেন রানাঘাট পাল চৌধুরী বালিকা বিদ্যালয়ের ৬৫ জন ছাত্রী এবং তাদের পাঁচ শিক্ষিকা।
তারা জানাচ্ছেন, একদিকে গঙ্গা ভাঙ্গন মানে ভূগোল অন্যদিকে কবির সমসাময়িক বিভিন্ন নিদর্শন মানে ইতিহাস এবং কবির অর্থাৎ সাহিত্য তো আছেই । তাই ছাত্রীদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এই স্থান বেছে নেওয়া হয়েছিলো।
পূর্বে লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই আজকে তাদের আসা। এতগুলো ছাত্রীকে দায়িত্ব করে ট্রেনে ভাড়া দিয়ে টোটো তে ভাড়া দিয়ে , দশটায় পৌছিয়েও বাড়ি ফেরৎ যেতে হচ্ছে একটার সময়। তিন ঘন্টা ধরে কর্তৃপক্ষকে অনুনয়-বিনয় করেও আনাতে পারেননি তারা।
সরকারী নিয়ম অনুযায়ী লাইব্রেরির সচিব হিসাবে দায়িত্বে থাকেন জেলা জনশিক্ষা প্রসার আধিকারিক, সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব থাকেন মহকুমা শাসক, এবাদেও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কৃত্তিবাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমিটি সদস্য হলেও। কারণ হিসাবে বক্তব্য দিতে একে অন্যের উপর দায়িত্ব চাপিয়েছেন। আমরা সদুত্তর পাইনি কারোর কাছ থেকেই, কেউ ধরলেন না ফোন কেউবা জানালেন স্থানীয় মেম্বাররা বক্তব্য জানাক।
একরাশ ক্ষোভ নিয়ে মুখ ভার করে ছাত্রীরা জানালো, ইতিহাস ভূগোল সাহিত্য শুধু কি বইয়ের পাতায় বন্দী থাকবে? এত টাকা ব্যয় করে লাইব্রেরী করে যদি সাধারণ মানুষের জন্যই উন্মুক্ত না হয় তাহলে লাভ কি?
উত্তর জানা নেই আমাদেরও। তবে যাদের উপর দায়িত্ব বর্তায়, যাদের উদাসীনতায় আগামী প্রজন্ম শিক্ষা তাদের জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।