স্বাধীনতা সংগ্ৰামীর স্বপ্ন নাতির প্রীতিভোজে মানবিক সেবা পরিপূর্ণতা পেল

Social

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার আমতা ১ নং ব্লকের রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষ বহন কারী গ্ৰাম সোমেশ্বর।
এই গ্ৰামের প্রয়াত যতীন্দ্রনাথ দাসের পুত্র চন্ডীচরণ দাস ভারত মাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের ব্রত নিয়েছিলেন। ছাত্রাবস্থায় সোমেশ্বর গ্ৰামের বিপ্লবী ভোলানাথ মাল, কলিকাতা গ্ৰামের বিপ্লবী কানাইলাল মন্ডল, রসপুর গ্ৰামের বিপ্লবী মম্মথনাথ মন্ডল,কানসোনা গ্ৰামের বিপ্লবী নিতাই মন্ডল ও অন্যান্য বিপ্লবীদের গোপনে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। সোমেশ্বর গ্ৰামের বিপ্লবী ভোলানাথ মালের সহায়তায় চন্ডীবাবুর পরিচয় হয় বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলির।বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি সোমেশ্বর বেসরকারি গার্লস প্রাইমারী বিদ্যালয়ে তখন শিক্ষকতা করতেন।এর পাশাপাশি তিনি গোপনে বিপ্লবীর কাজ করতেন। যুবকদের বিপ্লবের অগ্নীমন্ত্র দিতেন।চন্ডীচরণ দাস ও বিপ্লবের অগ্নীমন্ত্রে দীক্ষিত হন। এছাড়াও চন্ডীচরণ দাস পেয়েছিলেন বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, বিপ্লবী বিজয় সিং নাহার ও অন্যান্য বিপ্লবীদের সান্নিধ্য।চন্ডীবাবু ও অন্যান্য বিপ্লবীরা বিপিন বাবুর নেতৃত্বে অন্যান্য বিপ্লবীদের নিয়ে গোপনে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানান খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ক্লাস করতেন।চন্ডীবাবু সেই সময় বোমা বাঁধার কাজ শিখে নিয়েছিলেন।বোমা বাঁধার উপকরন সংগ্ৰহ করে তাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে মশলা বানিয়ে বোমা বাঁধার কাজে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছিলেন চন্ডীচরণ বাবু।

বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি চন্ডীচরণ দাসের এই কাজে বেশ খুশি হয়েছিলেন।আমতার যে কোনো এলাকাতেই বিপ্লবীদের গোপনে মিটিং হত, সেখানেই চন্ডীচরণ দাসের ডাক পড়ত। এভাবে বহু বছর ধরে বিপিন বাবু ও অন্যান্য বিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন চন্ডীচরণ দাস। তবে তিনি কখনো জেল খাটে নি।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি রেলে চাকরি করতেন। অবসরের পর থেকে এখন ও পর্যন্ত ৯৫ বছর বয়সে ও তিনি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন সমাজ সেবা ও সমাজের নানান উন্নয়ন মূলক কাজে। গড়ে তুলেছেন বিদ্যালয়, চিকিৎসা কেন্দ্র,সমবায় সমিতি ও নানান সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

স্বাধীনতার ৭৫ বছরে আর্কিওলজিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া, কলকাতা সার্কেল ১২ মার্চ ২০২২ সালে কলকাতায় মেটকাফ হলে এক অনুষ্ঠানে চন্ডীচরণ দাসকে স্বাধীনতা সংগ্ৰামী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে মানপত্র প্রদান করেন। কলকাতার সংস্কার ভারতী ১২ এপ্রিল ২০২২ সল্টলেকের একটি প্রেক্ষাগৃহে স্বাধীনতা সংগ্ৰামী হিসাবে চন্ডীচরণ দাসকে মানপত্র প্রদান করেন। মৌলানা আবুল কালাম ( মিনিস্ট্রি অব কালচার,ভারত সরকার) এশিয়ান স্টাডিজ থেকে ফলক পেয়ছেন ১৪ আগষ্ট২০২২ সালে। জনগণনার কাজে স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৬১ সালে তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে তিনি দেখেছেন বহু বিপ্লবীকে রক্ত ঝরাতে। রক্তের অভাবে বহু বিপ্লবীকে মারা যেতে ও দেখেছেন। বর্তমান সময়ে ও তিনি দেখছেন বহু মানুষকে রক্তের অভাবে মারা যেতে। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে আজ ও চন্ডীচরণ দাস বাবু ভোলেন নি স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই দিনগুলির স্মৃতি।

তিনি তাঁর নাতি প্রিয়ঙ্কর এর প্রীতি ভোজ অনুষ্ঠানে তাঁর স্বপ্নের রক্তদান শিবির সংগঠিত করলেন।নাতি প্রীয়ঙ্কর ও নাত বৌমা সুচরিতা -র প্রীতি ভোজ অনুষ্ঠানে ১২ জন মহিলা সহ ৩২ জন রক্তদান করে চন্ডীচরণ বাবুর স্বপ্নের মানবিক সেবার রক্তদান কর্মসূচী সফল বাস্তবায়ন করলেন।

Leave a Reply