মলয় দে নদীয়া :-জলাতঙ্ক। একে হাইড্রোফোবিয়া কিংবা পাগলা রোগও বলা হয়। আক্রান্ত রোগী জল দেখে বা জলের কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এই রোগের নাম হয়েছে জলাতঙ্ক। এটি প্রাণিবাহিত র্যাবিস ভাইরাসঘটিত রোগ, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। বাংলাদেশেও বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে থাকে দেশে।
জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি রোগের শেষ পর্যায়ে দেখা যায় না, এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এনসেফালাইটিস সৃষ্টি করে এবং এর পরেই মৃত্যু ঘটে।
জলাতঙ্কের একটি ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে, যার অর্থ হল উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি প্রকাশের আগে কিছু দিন এটি ব্যক্তির শরীরে সুপ্ত থাকে। প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, জ্বর এবং কামড়ের জায়গায় খিঁচুনি।
অত্যধিক লালা নিঃসরণ, গিলতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধার কারণে পানির ভয়, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, অনিদ্রা এমনকি আংশিক পক্ষাঘাত এবং কখনও কখনও কোমার মতো লক্ষণগুলি জলাতঙ্কের ইঙ্গিত দেয়।
ব্যক্তি শব্দ, আলো এবং এমনকি বাতাসের ঠান্ডা স্রোতে অসহিষ্ণু। বাতাসের ভয় (এরোফোবিয়া) দেখা যায়।
অবিলম্বে একটি বিপথগামী প্রাণীর কামড় বা আঁচড় এবং পেটে এই সমস্ত ইনজেকশনের সাথে যুক্ত, জলাতঙ্ক একটি গুরুতর ভাইরাল সংক্রমণ। সাধারণত, লক্ষণগুলি প্রকাশের সময়, সংক্রামিত ব্যক্তিকে বাঁচাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। যাইহোক, একজন ব্যক্তি যিনি জলাতঙ্কের সংস্পর্শে এসেছেন যদি তিনি অবিলম্বে সাহায্য চান তবে সাধারণত কার্যকরভাবে চিকিত্সা করা যেতে পারে।
নদীয়ার শান্তিপুর বাইগাছি পাড়ার ষাটোর্ধ্ব অত্যন্ত দরিদ্র এক ব্যক্তি, আজ থেকে প্রায় দু তিন মাস আগে, কুকুরের কামড় খেয়েও চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেননি। এরপর অসচেতন ভাবে ঘুরে বেড়াতে থাকে তিনি। ক্রমশই শরীর অসুস্থ হলে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। চিকিৎসকগণ তার লক্ষণ দেখে, কল্যাণী অথবা কল্যাণীর দুটি হাসপাতালের মধ্যে যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরকরণ করেন। অত্যন্ত অভাবি হওয়ার কারণে, বিনামূল্যে চিকিৎসা জেনে,কাজ কামাই এবং স্ত্রীর আসা-যাওয়া থাকা খাওয়া সামান্য খরচের ভয়ে ওই দুই দম্পতি পালিয়ে আসে হাসপাতাল থেকে।
এরপর শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে, শান্তিপুর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করা হয়, পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পাওয়ায় সহযোগিতা নেয় স্থানীয় তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাসের। অবশেষে কাউন্সিলর তাকে খুঁজে বের করে, স্থির থাকা খাওয়ার কিছু অর্থ ব্যবস্থা করে। এরপর শান্তিপুর হাসপাতালের এম্বুলেন্সে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওই জলাতঙ্ক আক্রান্ত বৃদ্ধ।
কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মহানুভবতায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো অর্থই লাগবে না, তবুও তাদের পরিবারের হাতে কিছু অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে। তবে পুলিশ প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে দেখেছি বিষয়টি। অসুস্থ ওই বৃদ্ধ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক এই কামনা করি, তবে তাদের দারিদ্রতা দূরীকরণে নজর রাখবো।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এভাবে অসুস্থতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একেবারেই ঠিক হয়নি, তবে চিকিৎসার জন্য তিনি গেছেন এতে প্রতিবেশীদেরও মঙ্গল।