মলয় দে নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর মিস্ত্রি পাড়ার বাসিন্দা, রমা সিংহ ৫৪ বছর ধরেই রবীন্দ্র এবং মানিক দুই মূক এবং বধির ভাইকে ভাইফোঁটা দিয়ে আসছে। যদিও রমাদেবীর একেবারে ছোটবেলায় সাত ভাইকেই ফোটা দিতেন, তবে বয়সে বড় দাদা হওয়ার কারণে এক এক করে সকলে ছেড়ে চলে যায়। এখন এই দুই ভাই বাদেও ওপর এক ভাই স্বপন সিংহকেও ভাইফোঁটা দিয়ে আসছেন, তবে তিনিও অসুস্থ।
মুক এবং বধির দুই ভাই রবীন্দ্র সিংহ বয়স ৫২ বছর, মানিক সিংহর বয়স ৪৯।অন্যান্য ভাইয়ের আইডি যার মতন সংসার করার সিদ্ধান্ত নিলেও রমাদেবী মূলত তার এই দুই ভাইয়ের কথা ভেবেই কখনো, বিয়ের কথা ভাবার ফুরসত পাননি। তার উপর সুস্থ স্বাভাবিক ভাই হলেও, অন্য কথা কিন্তু। কথা বলতে না পারা এবং কানে শুনতে না পারার জন্য তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেই কারণেই চিন্তাশীল তিনি। অনিয়মিত হলেও দুই ভাই সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পান মাসে এক হাজার টাকা করে, নিজে সুতো পাকিয়ে হাজার টাকা বাকি রেশনের সামগ্রী এবং এক ভাইপো প্রতিবেশী এবং বেশ কিছু সহৃদয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কোনরকমে চলছে তিনটি পেট।
দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন, পাকানোর সহযোগিতা করতে পারলেও অন্যজন শারীরিক অসুস্থতার জন্য পারে না কিছুই। রমাদেবীর দুশ্চিন্তা, তারও বয়স হচ্ছে, তিনি না থাকাকালীন আগামীতে দুই ভাইয়ের কি হবে।
আর সেই মঙ্গল কামনায় আজ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে, দুই ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা লাগাতে লাগাতে অঝরে কেঁদে ফেললেন। বিয়ে করে নতুন সংসার তিনি কোনদিনই আশা করেননি, তিনি মনে করেন ভাইদের সাথে থাকা বাবা মায়ের কর্তব্য পালন। এটাও তো সংসার ,যে সংসারে বড় হয়েছেন ছোট থেকে, তবে আগামীতে দুই ভাই দুমুঠো ভাত পেলেই তিনি শান্তিতে চোখ বুঝতে পারেন।