মদন মাইতি: পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের ডাবুয়া পুকুর গ্রামের মহিলাদের পরিচালিত একটি অন্যতম দুর্গোৎসব। সার্বজনীন ডাবুয়া পুকুর দুর্গোৎসব,পরিচালনায় “নবজাগরণ”। আট বছরে পদার্পণ করেছে। আশপাশের প্রায় ১৫ টি গ্রামের মধ্যে কোন পুজো ছিল না। দশ কিলোমিটার পনের কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দুর্গোৎসব দেখতে যেতে হতো এই ১৫ টি গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষজনদের।
পুজোর কটা দিনে পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারত না এই সমস্ত গ্রামের মানুষজনেরা। প্রথম বছর গ্রামবাসীদের পুজোর এই সমস্ত মনোবাসনা পূরণ করবার লক্ষ্যে পুরুষেরা মিলে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। পরে এই গ্রামের অধিকাংশ যুবকেরা ভিনদেশে ভিন রাজ্যে কর্মসূত্র থাকার কারণে পুজো প্রায় বন্ধের দিকে যাচ্ছিল। তারপর দায়িত্বভার তুলে নেন গ্রামের প্রায় শতাধিক মহিলারা। সেই থেকেই চার বছর ধরে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এই পুজো হয়ে আসছে। গ্রামের পর গ্রামের এই একটি মাত্র পুজো অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে করা হয়ে থাকে। পুজোর জন্য তৈরি করা হয়েছে পদ্ম ফুলের চাষ,ফুলের বাগান, বেল পাতার গাছ সহ একটি পুকুর কাটা হয়েছে। দুর্গা পুজোর জন্য ফুলের যাবতীয় উপকরণ নিজেদের তৈরি বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পুজোর বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলি হল এক মন ঘি পুড়িয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমীর দিন সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত লাইন দিয়ে চলে পুষ্পাঞ্জলি অনুষ্ঠান। অষ্টমীর দিন গ্রামের সকলকে খিচুড়ি ভোগ পাত পেতে খাওয়ানো হয়। তবে মহিলারা এই পুজোর আয়োজন করে থাকলেও ভিন রাজ্য থেকে পুরুষেরা পূজোর কটা দিন এসে একসাথে আনন্দ উপভোগ করেন। এই পুজোকে ঘিরে প্রায় ১৫ টি গ্রামের মানুষজনদের আনন্দের সীমা থাকে না। পঞ্চমী থেকে একাদশী পর্যন্ত নানান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয, বসে মাঠে বড় আকারের মেলা। এছাড়াও রক্তদান বস্ত্র দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।মহিলারা নিজেরা একটি নাট্য অনুষ্ঠান ও করে থাকেন। সর্বোপরি মহিলাদের দ্বারা একটি আকর্ষণীয় ধনুচি নাচের অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে এই পুজোকে ঘিরে।
এবারের নাট্যানুষ্ঠানে রেখেছে বিশেষ আকর্ষণ-সব সম্প্রদায়ের মানুষকে এক হয়ে চলার বার্তা দিয়ে নাট্য অনুষ্ঠানের নাম “জন্ম হল অভিশাপ”। প্রতিমা শিল্পী প্রতিমা গড়লেও শিল্পীকে সহযোগিতা করেন গ্রামের শিল্প মনস্কা মহিলারা। পুজোকে ঘিরে এত আনন্দ উচ্ছ্বাস থাকলেও এর মধ্যে একটি দুঃখ থেকে যায় গ্রামবাসীদের মনে। রাস্তাঘাট ভগ্নপায় অল্প বৃষ্টি হলে রাস্তা ঘাট কাদামাখা হয়ে যায়, জমে যায় জল তাতে সমস্যা তৈরি হয় পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের। এবং এই পুজো কমিটি, রেজিস্টার না হওয়ায় সরকারি ৬০ হাজার টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত। তাদের আশা সরকারি এই অনুদান পেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের এই পূজা অনুষ্ঠানে অনেক সহযোগিতা হতো।