সোশ্যাল বার্তা: জলে ভিজিয়ে রাখা ভাতকে পান্তা ভাত বলা হয় তবে অনেকে আবার জল ভাতও বলে। সহজেই বলা যায় পান্তা ভাত হলো ভাত সংরক্ষণ করে রাখার একটি প্রক্রিয়া। দিনে এবং রাতে খাবারের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে ভাত সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জলে ১০-১২ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলেই ভাত পরিণত হবে পান্তায়। ভাতে জল দিয়ে রাখলে বিভিন্ন ইস্ট এই শর্করা ভেঙ্গে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরির ফলে অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
গ্রামের মানুষ বিশেষ করে সারাদিন যারা কঠোর পরিশ্রম করেন তাদের কাছে ভাত সকালের প্রধান খাদ্য। পশ্চিম বাংলা, আসাম এবং উড়িষ্যায় ভাত খুব জনপ্রিয় খাদ্য। পয়লা বৈশাখে অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের উৎসবে পান্তা ভাত খাওয়া এখন বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে শহরের মানুষ এই দিনে সকালে পান্তা-ইলিশ খেয়ে থাকেন।গবেষণায় দেখা গেছে পান্তাভাতে ফ্রেশভাতের চেয়ে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীদের গবেষণার তথ্য মতে এই ভাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। ২০১১ সালে ‘দি টেলিগ্রাফ্ ইন্ডিয়া’ তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি জীব প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক পান্তাভাত নিয়ে এক গবেষণায় পান্তা ভাতের অনেক উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে একজন গবেষক অধ্যাপক মধুমিতা বড়ুয়া জানান যে, রান্না করা ভাতে এমন একটা উপাদান থাকে যা খনিজ উপাদান যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পর্যাপ্ত প্রাপ্তিতে বাধা দেয়। পক্ষান্তরে পান্তাভাতে বা গাঁজন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে হাইড্রোলাইসিস এর মাধ্যমে উৎপাদিত ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এর পুষ্টি-শোষণ বিরোধী ফ্যাক্টর যেমন-ফাইটিক এসিড ভেঙ্গে যায়। ফলে পান্তাভাতের খনিজ উপাদানগুলো মুক্ত হয় এবং এর গুণাগুণ বেড়ে যায়; অর্থাৎ গাঁজন প্রক্রিয়ায় খাবারের আবদ্ধকৃত অনুপুষ্টিসমূহের মুক্তি সহজ করে।
অধ্যাপক মধুমিতা বাড়ুয়া এর গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা সাধারণ (ফ্রেশ) ভাতের চেয়ে সমপরিমাণ পান্তাভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি।
এই প্রক্রিয়ায় পুষ্টি-প্রতিরোধী উপাদান ভেঙে দেওয়ার ফলে খাদ্য সহজে হজম হয় এবং খাবারের স্বাদও বেড়ে যায়। ভাতের গাঁজন প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে করা না হয় তাহলে এটা ক্ষতিকর হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া পাত্র সঠিকভাবে ঢাকতে হবে যাতে ধুলা-কণা প্রবেশ করতে না পারে।
আমেরিকান একদল বিজ্ঞানীর মতে গাঁজনকৃত ভাত খাদ্যনালীর প্রদাহ উপশম করে এবং শরীরের তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। এই ভাত কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে এবং শরীর ঝরঝরে রাখে, রক্তের উচ্চচাপ কমায় ও মানসিক প্রশান্তি আনে।
পান্তাভাত আগে গ্রামে সাধারণত সকালে লবণ, কাঁচা লংকা বা পোড়ানো, পেঁয়াজ এবং লেবু দিয়ে খাওয়া হতো। বর্তমানে ভাত চিংড়ি মাছ ভাজা, ডালের বড়া, সবজি,সরষের তেল,বেগুন পোড়া বা সেদ্ধ,আলু ভাজা,পটল ভাজা দিয়েও খাওয়ার চল হয়েছে।
পান্তাভাত যদি সঠিকভাবে খাওয়া যায় তাহলে সাধারণ মানুষের আয়রনের অভাব বা রক্তশূণ্যতা থাকবে না এবং ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব অনেকাংশে দূরীভূত হতে পারে।
অনেকেরই হয়ত মনে আছে শতায়ু ব্যায়ামবীর মনোহর আইচের কথা। যিনি নিয়মিত পান্তা ভাত খেতেন।
তথ্য কৃতজ্ঞতা: গুগোল