মলয় দে নদীয়া:- বাংলায় চড়ক ও শিবের গাজন এই দুটি অনুষ্ঠান একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূলত একটি লোকসংস্কৃতি মূলক অনুষ্ঠান চড়ক। চড়ক পুজোর আগের দিন চড়কের মূল দন্ড টিকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন করে মাটিতে ভালো ভাবেই বসানো হয় । চিরাচরিত প্রথা বা প্রাচীন রীতি অনুযায়ী বেশ কিছু চড়ক উৎসবে পিঠে বড়শি বিঁধিয়ে ঘোরানো হয় । এসময় অনেকেই প্রাচীন প্রথা বা সংস্কার বশত তার ছোট্ট সন্তান কে চড়ক সন্ন্যাসীর কোলে তুলে দেন আবার সন্ন্যাসীরাও চরকের থেকে ফল ও বাতাসা প্রভৃতি উৎসর্গ করেন মানুষের উদ্দেশ্যে । কিছু মানুষ এগুলো সাড়ম্বরে গ্রহণ করলেও এগুলির বাস্তবতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে । এখানে বিশেষ অনুষ্ঠান হলো হাজরা পুজো । যদিও এই অনুষ্ঠান টি মূলত সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ , এখানে সমাজের উচ্চ বৃত্ত মানুষের প্রাধান্য তেমন ভাবে নজরে পরে না । আর সেই কারণেই এই অনুষ্ঠান করতে গেলে পুরোহিতের দরকার পরে না । তবে এই গাজন বা চড়ক অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব হলো মানুষ হর পার্বতী সাজেন , অনেক গাজন সন্ন্যাসী কাঁটার ওপর দিয়ে বা মুখে কাঁটা বিধিয়ে আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটেন , পিঠে বড়শি বেঁধান , উপবাস করে থাকেন প্রভৃতি নানাবিধ কৃচ্ছোসাধনের মাধ্যমে ভগবান শিবের উপাসনা করেন । যদিও সরকারি আইনের মাধ্যমে এই মানুষের শরীরের ওপর এই ধরনের প্রথার বিরুদ্ধে সরকার বিধি নিষেধ জারি করলেও গ্রামাঞ্চলে ও মফস্বলে এই প্রাচীন প্রথাগুলো এখনো বলবৎ আছে ।
শান্তিপুরের শহরের লক্ষ্মী তলা পাড়া , বাঘা যতীন পাড়া , থানার মোর , সারা গর স্কুল মাঠ , চরজিজিরা , বুরশিব তলা , রাম নগর মাঠ —- এই সকল অঞ্চল গুলোতে চড়কের যথেষ্ঠ প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয় । এই চড়ক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাঠে মেলা বসে । শান্তিপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণে মানুষের সমাবেশ ঘটে । অনেকেই একটি চড়কের অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার পরে অন্য এলাকার চরকের অনুষ্ঠান দেখতে যান প্রবল ভিড় ও জনসমাগমকে উপেক্ষা করেই ।