লজ্জাজনক দিন ! বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের সাথে সহমত প্রকাশ করার জন্য বিজ্ঞানী ব্রুনো কে অগ্নিদগ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছিল 

Social

মলয় দে নদীয়া:- ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার জন্য পৃথিবীতে যতগুলো হত্যাকান্ড ঘটেছে তার ভেতর অন্যতম হল বিজ্ঞানী ব্রুনো হত্যাকান্ড।

১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে পুড়িয়ে মারা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়োর্দানো ব্রুনোকে। তার বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল কোপার্নিকাসের সাথে সহমত জ্ঞাপন করা। অর্থাৎ, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়- এই ধারণা পোষণ করা। সাত বছর ধরে বিচারকাজ চলার পর ১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট ব্রুনোকে একজন ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

রায় শুনে ব্রুনো বিচারকদের শাসিয়ে দিয়ে বলেন, “আপনারা হয়তো আমার সাথে হেরে যাবার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। আমি এটি গ্রহণ করলাম।” ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রোমের কেন্দ্রীয় বাজার Campo de’ Fiori এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সবার সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়। তাঁর দেহভস্ম এরপর ছড়িয়ে দেয়া হয় টিবের নদীতে। ব্রুনো তাঁর মৃত্যুর পর প্রভূত সম্মান লাভ করেন। মহাশূন্য নিয়ে তাঁর মতবাদই ধীরে ধীরে সবার কাছে সঠিক বলে পরিগণিত হয়।

গতকাল ছিল সেই ১৭ ফেব্রুয়ারী। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনেই হত্যা করা হয়েছিল এমন একজন মহান বিজ্ঞানীকে যিনি ধর্মান্ধদের সাথে আপোষ করেননি, সত্য প্রকাশে পিছপা হননি। তাকে হত্যা করে কি পৃথিবীর ঘূর্ণন থামিয়ে দেয়া গিয়েছিল? পৃথিবীকে সমতল প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছিল? তাকে হত্যা করে কি পৃথিবীকে সৌরজগতের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল?

সত্য প্রকাশিত হবেই। সত্যের জয় হবেই। আজ প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জিয়োর্দানো ব্রুনোকে। ইতিহাস আপনাকে মনে রেখেছে, চিরকাল রাখবে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, ” সারা দেশজুড়ে ধর্মীয়-অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, অপবিজ্ঞান ও অবিজ্ঞানের যেভাবে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার চলছে প্রতিনিয়ত, তা প্রতিহত করতে এবং সমাজ জীবনে ও মননে যথার্থ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিবোধ এবং আধুনিক বিজ্ঞান চিন্তা-চেতনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আজ সর্বত্র এবং প্রতিনিয়ত ব্রুনোর মত সকল বিজ্ঞানী মনীষাদের জীবন সংগ্রাম ব্যাপক চর্চার প্রয়োজন।”

গতকাল নদীয়ার নবদ্বীপে এ বিষয়ে একটি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

হার না মানা সত্যের পথে চলা বিজ্ঞানীর মৃত্যু দিবসে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি, শ্রদ্ধা জানাই কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা বিজ্ঞানীর প্রতি।

Leave a Reply