ক্যানসার আক্রান্তে কাটা পড়েছে পা ! তবুও হার মানতে রাজি নয় দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা

Social

দেবু সিংহ, মালদাঃ-ক্যান্সার আক্রান্তে কাটা পড়েছে বাম পা। চিকিৎসায় অনেক খরচ।ফলে বাড়িতেও দেখা দিয়েছে অর্থাভাব। তবুও হার মানতে রাজি নয় দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।ক্যান্সারকে হারিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে চায় সে। মারণ রোগ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে এবছরের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা।

বাবা দিনমজুর। ধার দেনা করে কোন ক্রমে মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু সেটাও শেষে ! ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। সেখানে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেখিয়ে কোন লাভ হয়নি। শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে বাড়ি। এমনই এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার মালিওর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সিমরাহা গ্রাম।

সেই গ্রামে বাড়ি, মিটনা উচ্চ-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আয়শা সিদ্দিকী। বেশ কয়েক মাস আগে বাম পায়ে ব্যথা অনুভব হওয়াতে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সেই চিকিৎসায় সাময়িক স্বস্তি মিললেও পরে আবার ব্যথা বাড়তে থাকে। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর ধরা পরে আয়েশার পায়ে ক্যানসার।পা কেটে বাদ না দিলে সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে । তাই ধার দেনা করে তার দিনমজুর বাবা ভিন রাজ্য থেকে অপারেশনের মাধ্যমে পা কাটার ব্যবস্থা করেন। বাম পা হারিয়ে লক্ষ্যে অবিচল আয়েশা সিদ্দিকা। সে ভেঙে পড়তে রাজি নয়। সামনের কঠিন লড়াই করবে। প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটাতে নারাজ আয়েশা। জীবনে কিছু করে দেখানোর অঙ্গীকার নিয়েছে কিছু করে দেখাতে চায়। তার পাশে দাঁড়িয়েছে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এদিকে আয়েশা সিদ্দিকার খবর শুনে তার বাড়িতে ছুটে আসেন এলাকার প্রাথমিক শিক্ষক তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান। আগেও করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এদিন তিনি আয়েশাকে আর্থিক সাহায্য করেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ছোট আয়েশা সিদ্দিকা। এলাকায় নিতান্তই দরিদ্র পরিবার বলেই পরিচিত। রেশন ছাড়া অন্যান্য সরকারি সুবিধা কিছুই মেলেনি। এমনকি সরকারি স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড দিয়েও চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি আয়েশার। হত-দরিদ্র দিনমজুর পিতা জিয়াউল হক তার সমস্ত অর্থ খরচ করেছেন আয়েশার চিকিৎসার পেছনে। ছটা কেমো দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক অভাবে দুটোর বেশি কেমো থেরাপি দিতে পারেন নি তিনি। মাটির ভাঙ্গা ঘরের বারান্দায় বসে বৃদ্ধ পিতা দিনমজুর জিয়াউল হক।মেয়ের দুরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জিয়াউল বাবু।

আয়েশার বাবা জিয়াউল হক জানান অনেক ভাবে ওর পা বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এ কোন কাজে আসেনি। এদিকে চিকিৎসার জন্য তিনি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। তবে মেয়ের সার্বিক সুস্থতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানান জিয়াউল বাবু। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং এলাকার তৃণমূল নেতা বুলবুল খান পাশে দাঁড়ানোয় কিছুটা ভরসা পাচ্ছেন এখন। তিনিও চান তার মেয়ে এই ক্যান্সার যুদ্ধে জয়ী হয় সমাজের একটা মুখ হয়ে উঠুক।

এ প্রসঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা জানান বেশ কয়েক মাস আগে তার বাম পায়ে ব্যথা হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানোর পর সাময়িক সুস্থতা লাভ করলো আবার সেই ব্যথা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তারপরে বাধ্য হয়ে কলকাতায় এনআরএস মেডিকেল কলেজে বায়োপসি করানো হয় সেখানেই ধরা পড়ে পায়ে ক্যান্সার হয়েছে তার। এরপরে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তায় আয়েশা ব্যাঙ্গালোর যায় বাবা মার সঙ্গে। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শে তার বাম পা কাটা যায়। এখন এক পায়ে আয়েশা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটাবেন। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সামনে এগিয়ে চলবে। জীবনে কিছু করে দেখাতে মরিয়া আয়েশা।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক তথা জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান জানান মেয়েটির ব্যাপারে তিনি সবরকম সাহায্য করবেন। মেয়েটির প্রতিবন্ধী প্রশংসা পত্র এখনো হয়নি সে ব্যাপারেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেবেন বলে জানান বুলবুল বাবু। তাছাড়া মেয়েটির চিকিৎসা ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যা যা সাহায্য দরকার হবে তার সাহায্য করতে প্রস্তুত তৃণমূল নেতা তথা শিক্ষক বুলবুল খান।

Leave a Reply