মলয় দে, নদীয়া :- শাস্ত্রমতে হনুমানের জন্ম হয়েছিল পূর্ণিমা তিথিতে। মঙ্গলবার ২৬ শে এপ্রিল দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা! ছিল ২৭শে এপ্রিল অর্থাৎ গতকাল সকাল 9টা 01 মিনিট পর্যন্ত।
ভক্তেরা এই দিন সর্ষের তেল দিয়ে হনুমানের মূর্তির অভিষেক করেন, শৃঙ্গার করেন কমলা রঙের সিঁদুর দিয়ে। এই অভিষেক এবং শৃঙ্গার শেষ হলে ফুল, মালা অর্পণ করতে হয় বজরঙ্গবলীকে, তাঁর সামনে জ্বালাতে হয় তেলের বা ঘিয়ের প্রদীপ। সব শেষে তাঁর পাদদেশ থেকে নিয়ে কমলা সিঁদুরের তিলক পরতে হয় নিজের কপালে।
এই দিন হনুমান চালিশা, সম্পূর্ণ রামায়ণ বা নিদেনপক্ষে মহাকাব্যের সুন্দরকাণ্ড পাঠ করা অবশ্য কর্তব্য। পবনপুত্রের ভক্তেরা নিষ্ঠা ভরে দেবের পুজো করলে, সংসার ভরে উঠবে সৌভাগ্যে । এমনটাই বিশ্বাস করেন ভক্তবৃন্দরা।
এভাবেও প্রতি মঙ্গলবার হনুমান চল্লিশা পাঠ করাও প্রচলন আছে হিন্দু ধর্মে।
হিন্দিভাষী বলয় এই পুজোর আড়ম্বরতা অনেক বেশি থাকলেও বহু প্রাচীনকাল থেকে বাংলাতেও যথেষ্ট সমাদরে পূজিত হয়ে থাকেন পবন পুত্র হনুমান। শক্তি এবং আনুগত্যের প্রতীক হিসাবে বিভিন্ন ব্যায়ামাগারে ক্লাবেও এই পুজোর চল যথেষ্ট। রাম সীতার সাথে একই আসনে বসিয়ে পুজো করেন অনেক হিন্দু পরিবারেরও।
সবার প্রথমে জানিয়ে না রাখলেই নয়- পবনপুত্র হনুমানের জন্মতিথি নিয়ে কিন্তু মতভেদ আছে। এই বিষয়ে দেশের উত্তর অংশের শাস্ত্র এক রকম মতপোষণ করে, আবার দক্ষিণ ভারতে আলাদা তিথিতে উদযাপিত হয় হনুমান জয়ন্তী। উত্তর ভারত এক্ষেত্রে চৈত্র মাসটিকে হনুমানের জন্মমাস হিসেবে নির্দেশ করেছে। জানিয়েছে যে চৈত্র মাসের পুণ্য পূর্ণিমা তিথিতে মাতা অঞ্জনার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন হনুমান।
রামায়ণ এবং নানা পুরাণ বলে যে লঙ্কার রাক্ষসরাজা রাবণকে বধ করার জন্য বিষ্ণু যখন অযোধ্যায় রামাবতার রূপে জন্মের সঙ্কল্প নেন, তখন দেবতারাও দলে দলে তাঁকে সাহায্য করার জন্য পৃথিবীতে অবতার গ্রহণের সঙ্কল্প নেন। সেই মতো তাঁদের গর্ভে ধারণ করার জন্য অপ্সরারা পৃথিবীতে বানর এবং ভল্লুক কুলে জন্মগ্রহণ করতে শুরু করেন। এঁদের মধ্যে এক অপ্সরার নাম ছিল পুঞ্জিকাস্থলা, তিনি বানরকুলে অঞ্জনা নামে জন্মগ্রহণ করেন। কোনও কোনও পুরাণ মতে এই রূপবতী অঞ্জনাকে দেখে মুগ্ধ হন পবনদেব, তিনি সুকৌশলে তাঁর বস্ত্র উড়িয়ে নিয়ে যান। অঞ্জনা ভয় পেয়ে গেলে তাঁকে দর্শন দিয়ে অভয় দেন পবনদেব এবং উভয়ের মিলনে হনুমানের জন্ম হয়।
অন্য মতে, শিবের বীর্য পবনদেব নিশাকালে স্থাপন করেছিলেন অঞ্জনার গর্ভে। তাই মূলত শিবের অংশ হলেও হনুমানকে পবনপুত্র নামে আখ্যা দেওয়া হয়।