শরীর সুস্থ রাখতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে নয়নতারা ! আপনার সমস্যা থাকলে ফল পাবেন হাতেনাতে

Social

নয়নতারা একটি বর্ষজীবী ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। অনেক বছর বেঁচে থাকতেও দেখা যায়। তবে পুরনো হয়ে গেলে ও যত্নে না রাখলে গাছটি শক্ত হয়ে যায়, ফুলও ধরে না। উচ্চতায় ২ থেকে ৩ ফুটের হয়। পাতা বিপরীত, মসৃণ, আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতি। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল। গোলাপি, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের ফুল ফোটে। তবে গন্ধ নেই ফুলে। কাণ্ড কোনাচে ধরনের,রঙ বেগুনি বা সাদা,বারমাসি উদ্ভিদ, বীজের সাহায্যে বংশ বৃদ্ধি হয়।

নয়নতারা ওয়েস্ট ইণ্ডিজের প্রজাতি। ভারতবর্ষ ,বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দেখা যায়। এদের কাণ্ড কোনাচে বেগুনি। এদের পাতা আয়তাকার,গোড়ার দিকে অনেকটা ডিম্বাকার, ৪-৭ সেমি লম্বা, মসৃণ। এসব গাছে প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে। ফুল সাদা বা গোলাপি রঙের,পুরো ফুল একরঙা হলেও ফুলের মধ্যবিন্দুটি অন্য রংয়েরও হয়। যেমন সাদার মাঝে লাল,গোলাপীর মাঝে হলুদ।ফুলটি গন্ধহীন। ফুলের মাপ ৩-৩.৫ সেমি চওড়া, দলনল সরু, ২.৫ সেমি লম্বা, ৫ পাপড়ির মাঝখানে একটি গাঢ় রঙের ফোঁটা। এদের বীজ চাষ করা হয়। বাগান করে চাষ করায় জনপ্রিয়তা রয়েছে,যেকোন ফুল বা ফলের বাগানে এমনকি বাড়ির ছাদে বা বারান্দায়ও লাগানো যায়।

নয়নতারা ফুলের গুণাবলী এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে এটির ব্যবহার খুব বেশী, বিশেষ করে কঠিন অসুখ, মারণ রোগের বিনাশ ঘটায় এই নয়নতারা ফুল।

শুধু রোগ নয় বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবনে প্রতিনিয়ত চিন্তার যে ছাপ তারও সমস্যার সমাধান ঘটাতে সক্ষম এই নয়নতারা ফুল।

 স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি:-স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি থেকে দূরে রাখতে সক্ষম নয়নতারা। বর্তমান যুগে মানুষের এই প্রতিযোগিতার জীবনে কাজের চাপ, মানসিকচিন্তা যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। মানুষের এগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ট্রেস ও মানসিক অবসাদ ফলে মানুষের জীবনকে খুব কঠিন পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। নয়নতারা ফুলের মধ্যে থাকা বিশেষ উপাদান যা শরীরে গেলে রক্তের সাথে মিশে স্ট্রেস কমিয়ে দিতে থাকে। অ্যাংজাইটি কমাতেও এটি সমান কার্যকরী।

ডায়বেটিস বা মধুমেহ:

ডায়বেটিসের মতো রোগ নয়নতারা ফুলের উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে ডায়বেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে রাশ টানতে নয়নতারা ফুলের বিকল্প নেই। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয়না যার ফলে এটি ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি :
মস্তিকের কার্যক্ষমতা উন্নতি হতে পারে এই নয়নতারা ফুলের মাধ্যমে।
ফুলের মধ্যে থাকা দেহে ভিনকামাইনের পরিমাণ বাড়ায় মস্তিষ্কে দ্রুত রক্ত চলাচল ঘটে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ঘটায় এবং স্মৃতি শক্তি বা স্মরণশক্তি তীক্ষ্ম করে তুলতে সাহায্য করে। দেহে ভিনকামাইনের পরিমাণ বাড়ায় তা কগনিটিভ পদ্ধতির দ্রুত উন্নতি ঘটায় যা মস্তিকের বিকাশ ঘটায়।
নয়নতারা ফুলের রস রোজ চায়ের সাথে পান করলে অারও বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়।

রক্তক্ষরণ হ্রাসের উপশম :
নয়নতারা ফুল রক্তক্ষরণ হ্রাসের এক অতুলনীয় ওষুধ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে গেলে তা বন্ধ করতে এটি ব্যবহার করা হয়। কোনো কাটা জায়গায় নয়নতারা ফুলের রস বা থেঁতো করে লাগলে সহজে উপকার পাওয়া যায়।নয়নতারা ফুল পাইলসের রোগীদেরও খুব উপকার করে। এই ফুলের বাটা মলদ্বারে লাগলে রোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

ক‍্যান্সারের নিরামক:
ক্যান্সারকে মারণ রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই রোগ হলে মৃত্যুই একমাত্র ভবিতব্য বলে ধরে নেওয়া হয়। বর্তমান পৃথিবীতে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে কিন্তু এই ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসাতে সাফল্য মিলতে পারে।

হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি:
নয়নতারা ফুলের উপকারিতা হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়ক। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমাতে পারে নয়নতারা ফুলের রস। নিয়মিত খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের দীর্ঘ আয়ু হবে। এটি হার্টের বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে সক্ষম কিন্তু মাঝে মধ্যে খেলে হবে না তার জন্য নিয়মানুযায়ী প্রত্যহ খাবার অভ্যাস করতে হবে।

ব্লাডপ্রেসার :
ব্লাড প্রেসারের মতো অসুখ রোজ সকালে ৪-৫টি ফুলের বাটা খাওয়া দ্বারা উপশম পাওয়া যায়। তাই ব্লাড প্রেসার অধিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে নয়নতারা ফুলের রস খাওয়া আবশ্যক।

অনিদ্রা:
অনিদ্রা দূর করতে নয়নতারা ফুলের রস দিয়ে তৈরি চা হল এই রোগের অনত্যম সহজলভ্য ওষুধ। অনিদ্রা থেকে চোখের কোনে কালি এবং আরও নানা রোগের উৎপত্তি ।

ব্যস্ততর জীবন ব্যস্ততম হয়ে উঠেছে তাই কাজের তালিকা তবুও দিনের ৭ঘন্টা ঘুম দরকার। মানুষের জীবনে স্বস্তির নিশ্বাস আনতে জীবনধারণের ধরন পরিবর্তন জরুরী হলেও তা অসম্ভব হওয়ায় ভেষজের সাহায্য নিয়ে যতটা হয় ততটাই লাভ। সর্বদা মনে রাখা জরুরি “স্বাস্থ্যই হল সম্পদ”। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে জীবনে সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করাও জরুরি।

নয়নতার ফুলের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :
তবে এই নয়নতারা ফুলের পাপড়ি দিয়ে চা বেশি পরিমাণে খেলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

১| পেট খারাপ বা গ্যাস হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে যায়।

২| লিভার, কিডনি বা ফুসফুসের রোগ থাকলে এই চা খাওয়া উচিত নয়। যাদের ব্লাড প্রেসার কম, তাঁদেরও এই পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

৩| সবে যারা মা হয়েছেন, তাঁদেরও এই চা খেতে বারণ করেন বিশেষজ্ঞরা।

৪| সামনে কি কোনও অপারেশন আছে? তা হলে এই চা পান করা চলবে না। এমনকী অপারেশনের পরের কয়েক মাসও এই পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

৫| এই চা দিনে চার কাপের বেশি খাওয়া চলবে না। এর বেশি হলেই লো ব্লাড প্রেশার, মাথা যন্ত্রণা, খিদে কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা’র মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply