ভারত বরেণ্য পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের ১২৫ তম জন্ম দিবস নীরবেই হলো হৃদয়ের অন্তস্থলে

Social

মলয় দে, নদীয়া:- ভারতবর্ষের তিন পন্ডিতের এক পন্ডিত নদীয়ার শান্তিপুরের পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র জন্মগ্রহন করেন ১৮৯৫ সালের ২৩শে জুলাই ৷ এবছর ১২৫বছর পূর্ন হলো ৷ অত্যন্ত মেধাবী লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র এম এ, বি. এল., কাব্য সাংখ্য তীর্থ ডিগ্রী লাভ করেন কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ৷ ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইন পেশা ছেড়ে দিয়ে শান্তিপুরে পৈতৃক বাড়িতেই ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে “শিল্পাশ্রম” তৈরী করেন ৷ ১৯৩৪সালে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার দিকে অগ্রসর হলে তীব্র প্রতিবাদ করে আরেক পন্ডিত মদন মোহন মালব্য কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই উপদল “জাতীয় কংগ্রেস দল” গঠন করলে পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র তাতে যোগদেন ৷

১৯৩৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বাংলার প্রেসিডেন্সী ডিভিশন থেকে পন্ডিত মদন মোহন মালব্যের “জাতীয় কংগ্রেস দলের” প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস দলের প্রার্থী হেমন্ত সরকারকে পরাজিত করেন ৷ এরপর কেন্দ্রিয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন ৷ ১৯৪৬ সালে কোলকাতা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র ৷ ১৯৪৮সালে অস্থায়ী পার্লামেন্ট গঠন হলে ড. আম্বেদকরের নেতৃত্বে গঠিত ভারতীয় সংবিধান রচনা কমিটির সদস্য হন ৷ কিন্তু পন্ডিত জওহর লাল নেহরুর চাটুকারিতা না করার জন্যই বাঙালী পন্ডিতকে সেভাবে গূরুত্বই দেওয়া হয় নি ৷ তাই সংসদে তাঁর কোন মূর্তি নেই বলে আক্ষেপ রয়েছে তাঁর ঘনিষ্টদের ৷ আসল পন্ডিতের প্রসারতাকে যে দাবীয়ে রাখা যায় না, তার প্রমান পাওয়া যায় সংসদে দেওয়া তাঁর বক্তৃতামালা থেকে ৷ তাঁর ক্ষুরধার যুক্তির কাছে পন্ডিত নেহরুও অসহায় বোধ করতেন ৷

১৯৫২সালের সাধারন নির্বাচনেও পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্র থেকে পুনরায় হেমন্ত সরকারকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন ৷ পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র এবং ড. শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় দুজন ভিন্ন মতাবলম্বী হলেও ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু ৷ ১৯৪৭সালে দেশ বিভাগের সময় নদীয়ার বিস্তৃত অংশ চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে ৷ বৈষ্ণব প্রধান অঞ্চল নদীয়ার বিস্তৃর্ন অংশকে ভারতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র জওহর লাল নেহরুকে বোঝাতে সক্ষম হলে ১৮ই আগষ্ট শান্তিপুর সহ নদীয়ার বিস্তৃর্ন অংশ আবার ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হয় ৷

এছাড়া শান্তিপুরের রেল স্টেশন তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে ৷ কবিগুরুর শান্তিনিকেতনের আদলে শান্তিপুর কলেজ প্রতিষ্টা তিনিই করেন বেশ কয়েকজন মানুষের সহযোগিতায় ৷ শান্তিপুর পৌরসভার পৌরপতি, নদীয়া জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সহ কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন পদের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ এছাড়া শান্তিপুরের পূরান পরিষদ, সাহিত্য পরিষদ, পাবলিক লাইব্রেরীতেও তাঁর অবদান রয়েছে বলে জানা গেছে ৷

১৯৫৩ সালের ২৫শে জুলাই বাগ্মী সাংসদ পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের জীবনাবসান হয় ৷
পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের পূন্য জন্মদিনে তাঁরই সুযোগ্য পুত্র বিশিষ্ট আইনজীবী এবং রাজনৈতিক সন্ন্যাসী কাশীকান্ত মৈত্র  পিতৃস্মৃতি রোমন্থন করলেন ।

Leave a Reply