মলয় দে নদীয়া:- ৭১এর ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধের শহীদরা অবহেলায়, অনাদারে পড়ে রয়েছে নজর নেই সরকারি বেসরকারি কারোরই।সংগঠনের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে রবিবার সকালে এতদিন লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা ৭ জন শহীদ ভারতীয় সৈনিকের সমাধিতে মাল্যদান করে শহীদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন নদীয়ার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার প্রাক্তন সেনাকর্মী ও এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। প্রাক্তন সেনাকর্মী ও কর্মজীবন থেকে অবসর প্রাপ্তদের নিয়ে এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের পথচলা শুরু হয় ২০২২ সালের ২৪শে এপ্রিল।
এই প্রসঙ্গে এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী সুকুমার ঘোষ জানান, আজ সংগঠনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সূচনা করা হলো ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন ৭ জন ভারতীয় জওয়ানের সমাধিতে মাল্যদান করে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি এই দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সদস্যরা। তিনি বলেন,১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বলবন্ত সিং, ভৈরব দত্ত, মোহন সিংহ, মূর্তি সিংহ, মহেশ্বর সিংহ, দুর্গা সিংহ ও তেক বাহাদুর নামের এই ৭ জন ভারতীয় সেনা কর্মী শহীদ হয়েছিলেন। এরপর যুদ্ধ চলাকালীন তাদের এই স্থানে কবরস্থ করেন তৎকালীন ভারতীয় সেনা আধিকারিকেরা।
এরপর সময়ের সাথে সাথে কেটে যায় প্রায় ৫০ বছর। কালের নিয়মে শহীদ সেনা জওয়ানদের সমাধি স্থানটি চলে যায় লোক চক্ষুর আড়ালে। স্থানীয় মানুষজন এই সমাধির কথা জানলেও সেই অর্থে গুরুত্ব সহকারে কেউ এতদিন সমাধি স্থানটিকে সংরক্ষণ করার বিষয়ে ভাবেননি।
মানুষজনের যাতায়াত না থাকার কারণে কার্যত অনাদরে কৃষ্ণগঞ্জের খাল বোয়ালিয়ামোড় এলাকায় মল্লিকদের বাগানে শহীদদের এই সমাধি স্থানটি বর্তমানে জলা জঙ্গলে আবৃত হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানতে পারেন এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তৎক্ষণার তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে শহীদ জওয়ানদের সমাধি স্থানটিতে ভোরে থাকা জলা জঙ্গল কেটে জায়গাটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলেন। এবং সংগঠনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে সোমবার সকালে ওই স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে শহীদ ভারতীয় জওয়ানদের মাল্যদানের মধ্যে দিয়ে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এক্স সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্যরা। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী দিনেও আর্মি ডে থেকে শুরু করে স্বাধীনতা দিবস প্রজাতন্ত্র দিবস ছাড়াও বিভিন্ন বিশেষ দিনে এখানে উপস্থিত হয়ে সাত জন শায়িত ভারতীয় শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হবে বলে এইদিন জানান সুকুমার ঘোষ।
বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন কৃষ্ণগঞ্জ এর বিশিষ্ট সমাজসেবী শিবপ্রসাদ কুন্ডু । তিনি বলেন বয়স ৫৮ বছর তিনিও জানতেন না এই স্থানে শায়িত রয়েছে সাত জন জোয়ানের শহীদ বেদী । তিনি এসোসিয়েশনের সকলকে এই অজানা স্থানটি উদ্ধার করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন । পাশাপাশি তারা এই জঙ্গলটি পরিষ্কার করে প্রাথমিকভাবে চুন দিয়ে শহীদ বেদী গুলো রং করেছেন এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান । তিনি আক্ষেপ এর সঙ্গে বলেন যে জোয়ানরা দেশের জন্য প্রাণ দিলেন তারা যেভাবে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এটা ভাবতেও তার নিজেরও লজ্জা লাগে । তিনি সংগঠনের কাছে অনুরোধ করেন এই স্থানটিতে কিছু করার পরিকল্পনা করা হোক । সরকারের উচিত এই স্থানটি অবিলম্বে সংরক্ষণ করা । সেনাবাহিনীর এক কর্মী সমীর ঘোষ বলেন আমরা যখন এই স্থানটি উদ্ধার করতে পেরেছি তখন আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থ খরচ করে এই স্থানটিকে আমরা সংরক্ষণ করবোই । মূলত এই কথাই প্রত্যেকেই করতালি দিয়ে স্বাগত জানান ।