নদীয়ার চাঁদপুরে মেঘাই সরদারের মূর্তি এবং সংগ্রহশালা উদ্বোধন 

Social

মলয় দে নদীয়া :-নদীয়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লকে আসাননগরের চাঁদপুর এলাকায় মঙ্গলবার উন্মোচিত হয় মেঘাই সর্দারের মূর্তি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নদীয়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তার মূর্তি এবং একটি সংগ্রহশালা যেখানে মাটির পুতুলের মাধ্যমে সে সময়কার আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনা অস্ত্রশস্ত্র ছাত্র-ছাত্রী সহ সকলের জন্য উন্মোচন করে দেওয়া হয়।

উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু এবং সম্পাদক সৌমেন দত্ত সহ, দীর্ঘদিন যাবত আদিবাসীদের নানান দাবি আদায়ের এবং তাদের নিজস্বতা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সংগঠন দিশারির কর্ণধার মানসী দাস সহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন এবং সমাজের সকল স্তরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজন।

উল্লেখ্য, বাংলার কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল, নীল বিদ্রোহ। আঠেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয় বাংলাজুড়ে। ভারতে আগত নীলকর সাহেবরা বিভিন্ন অঞ্চলে নীল চাষিদের অল্প টাকার বিনিময়ে নীল চাষ করত। চাষ না করলে সাহেবরা অকথ্য অত্যাচার করত। করা হতো শোষণও।
এর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়েই নীলচাষিরা সঙ্ঘবদ্ধ হন। নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন নদীয়ার এই আসাননগরের মেঘাই সর্দার। এছাড়াও এই বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত নদীয়ার বিষ্ণুচরণ দাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নামও উল্লেখযোগ্য।

আসাননগরের বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর গ্রাম। এই চাঁদপুর একটি আদিবাসী পাড়া। গ্রামের মাঝে মাধবীতলায় রয়েছে মেঘাই সর্দারের সমাধিস্থল, আর সেখানেই এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই গ্রাম।

এ প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা পরিষদের সভাপতি রিক্তা কুন্ডু জানান, অনেক আগেই আমাদের করা দরকার ছিলো, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য কারণে একটু দেরি হলো ঠিকই তবে, সংগ্রহশালাও প্রস্তুত হয়ে গেলো। এব্যাপারে নদীয়া জেলা পরিষদের সম্পাদক সৌমেন দত্ত বলেন, মেঘাই সরদার কে? স্বাধীনতা সংগ্রামে কি অবদান! তা হয়তো জানে না অনেকেই, এবারে তা অনেকটা সহজ হয়ে গেলো সাধারণ মানুষের কাছে।

দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আদিবাসীদের নানান সংস্কৃতি ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং তাদের সমস্যা এবং সমাধানে অভিভাবকের মতন কাজ করা সংগঠন দিশারীর কর্ণধর মানসী দাস, নদীয়া জেলা পরিষদ এবং রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, আদিবাসী সমাজ তথা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের বহুদিনের ইচ্ছা কিছুটা পূরণ হলো আজ। তবে, সে সময় বড়লাটের হেডকোয়ার্টারে, বোম মারার পর মেঘাই সরদার কে তাড়া করে ব্রিটিশ পুলিশ, তার লাঠি ঘোরানো ঠেকিয়ে দিয়েছিল পুলিশের গুলিও, কিন্তু দৌড়ানোর সময় কিছুটা দূরে গর্ততে পা পড়ে তিনি পড়ে যান মাটিতে এরপর পুলিশ ধরে তাকে ফাঁসিতে চড়ান ওই স্থানে, যা আজ ফাঁসি তলা নামে পরিচিত। উত্তর প্রান্তে একটি বড়লাটের হেডকোয়ার্টারে ধ্বংসস্তূপ, নীল জ্বাল দেওয়া লোহার বড় কড়াই, চুল্লি , জাহাজ ঘাট এ সবই সংরক্ষিত হোক। শুধু এই গ্রাম বলে নয়, নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসীদের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিতকরণ তরুণ নির্মিত হোক, যাতে তাদের শিল্প সংস্কৃতি দেখতে মানুষ আসুক ভীড় করে। তাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক অন্যদিকে গড়ে উঠুক পর্যটন কেন্দ্র।

মেঘাই সর্দার সম্পর্কে, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তিনি আনুমানিক একশো পাতার একটি বই মুদ্রা প্রকাশনীর মাধ্যমে খুব শীঘ্রই প্রকাশ করতে চলেছেন। যেখানে, জানা-অজানা নানান রকম তথ্য সংগ্রহীত হয়েছে আদিবাসী সমাজের প্রাচীন মানুষদের কাছ থেকে এবং তৎকালীন বিভিন্ন লেখকের লেখনীর মধ্য থেকে।

Leave a Reply