দেবু সিংহ,মালদা:- মাত্র ৭ বছর বয়সে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নিজের নামের জায়গা দখল করতে চলেছে আত্মজা!
বাড়ি আসলে নদিয়ার রানাঘাটে৷ তাতে কী! এখন তো সে মালদারই মেয়ে৷ সেই মেয়েই উজ্জ্বল করেছে নিজের নাম, তার বাড়ির নাম, এমনকি মালদার নামও৷ কাগজের ব্যাগ তৈরি করে সে এখন গোটা দেশের খবরের শিরোনামে৷ তার তৈরি কাগজের ব্যাগ ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা পেয়েছে৷ তার শংসাপত্রও মেল মারফৎ হাতে পেয়ে গিয়েছে সে৷ এবার মিশন গিনেস বুক৷ তার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সে৷ মেয়েকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে কসুর নেই বাবা-মাবাবারও৷
মেয়ের নাম আত্মজা৷ মাত্র সাত বছর বয়স৷ বাবা বাবুসোনা সরকার প্রাথমিক শিক্ষক৷ বাহারাল এলাকার একটি স্কুলে কর্মরত তিনি৷ চাকরি সূত্রে মাত্র ছ’মাস আগে রানাঘাট থেকে পরিবার নিয়ে মালদা জেলায় এসেছেন৷ বর্তমানে তাঁদের ঠিকানা রতুয়ার নাপিতপাড়া৷ মা মৌসুমি কর হস্তশিল্পী৷ সরকারি মান্যতাও পেয়েছেন তিনি৷ সংসার সামলে এখনও নিত্যনতুন জিনিস বানান৷ তাঁর কাছেই শিল্পের শিক্ষা পেয়েছে মেয়ে৷
করোনা এসেছিল লকডাউন নিয়ে৷ সেই সময় শিশুদের মানসিক বিকাশ যে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা একবাক্যে স্বীকার করেন মনোবিদরা৷ অদ্ভুতভাবে সেই লকডাউনই আত্মজার কাছে নতুন একটা দরজা খুলে দিয়েছিল৷ শিল্পের দরজা৷ নিজের শৈল্পিক বিকাশের দরজা৷ মাধ্যম অবশ্যই মা৷
মৌসুমিদেবী বলছেন, ‘আমি যখন কাজ করতাম, তখন ও আমার পাশে বসে রং-তুলি নিয়ে খেলত৷ ওর সেই খেলা দেখে আমি ওকে ছবি আঁকতে শেখাই৷ কীভাবে ছবিতে রং করতে হয়, জানাই সেটাও৷ পরে দেখি, শুধু ছবি আঁকা নয়, আমার মতো অন্যান্য জিনিস তৈরিরও চেষ্টা করছে ও৷ এভাবেই ওকে বিভিন্ন জিনিস বানাতে শেখাই৷ তবে যে কারণে ও ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা পেয়েছে, তার কৃতিত্ব ওর বাবার৷ মেয়ের এই সাফল্যে মা হিসাবে আমার গর্ব তো হবেই৷ তবে ওর কাছে আমি বেশি কিছু দাবি করি না৷ শুধু চাই, ও আনন্দে থাকুক৷ আর খেলতে খেলতেই শিল্পের প্রতিটি দরজা খুলে দিক৷ ও যে শিল্পের মধ্যে বেঁচে থাকাকে শিখে ফেলেছে, তার জন্য আমি আরও বেশি গর্বিত৷’
বাবুসোনাবাবু জানান, ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে মেয়ের জায়গা পাওয়া অনেক চেষ্টার ফসল৷ গোটা বিশ্বেই প্লাস্টিকের ব্যবহার আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এর বিকল্প কাগজের ব্যবহার৷ আমার চোখে পড়েছিল, মেয়ে তার পুতুলের জন্য অনেক জিনিস তৈরি করছে৷ আমিই তাকে বলি, পুতুলের জন্য ছোট কাগজের ব্যাগ করা যায় কিনা৷ ও চেষ্টা করতে শুরু করে৷ এভাবেই দেশের সবচেয়ে ছোট কাগজের ব্যাগ বানিয়ে ফেলে৷ যেটা তাকে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করে দিয়েছে৷ ওর মা’ই ওকে সবকিছু শেখায়৷ আমরা চাইছি, মেয়ের নাম এবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও জায়গা পাক৷ তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ বেশ কয়েকটি নমুনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ তবে এখনও সেখান থেকে কোনও বার্তা আসেনি৷ তবে শুধু আত্মজা নয়, আমি চাই, আমার মেয়ের মতো সমস্ত বাচ্চাই পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতিতে এগিয়ে আসুক৷ তবেই পৃথিবী ভালো থাকবে৷’
গত ৬ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের তরফে আত্মজাকে ই-মেইল করে জানানো হয়, তার তৈরি ৫ X ২.৪ সেন্টিমিটার মাপের কাগজের ব্যাগ দেশের সবচেয়ে ছোট ব্যাগ হিসাবে মান্যতা পেয়েছে৷ তার জন্য আত্মজাকে একটি শংসাপত্রও পাঠানো হয়েছে৷ ২০২৪ সালের রেকর্ড বুকে তার নাম উঠবে৷
সাত বছরের আত্মজা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী৷ নতুন জায়গায় এসে নতুন বন্ধুও হয়েছে অনেক৷ কিন্তু কারও সঙ্গে এখনও তেমন ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি৷ ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা পেয়ে খুব খুশি সে৷ জানাল, ‘যদি বন্ধুরা কেউ এসব শিখতে চায়, আমি শেখাতে রাজি৷ তবে কেউ এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কিছু শিখতে চায়নি৷ আমিও শেখাইনি৷ আমি আরও কাজ করতে চাই৷’