মলয় দে নদীয়া :-হেলেন কেলার শুধু একটি নাম নয় এই মানুষটি সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে তাদের জীবনের সফলতার রাস্তায় চলার অনুপ্রেণা হয়ে রয়েছেন।
হেলেন কেলার তার জীবনের শুরুর দিকেই তার চোখে দেখার, কানে শোনার, আর কথা বলার শক্তি হারিয়ে ছিলেন কিন্তু তার পরেও তার জীবনে যে পরিবর্তন আসছিলো তা অনেক স্বাভাবিক মানুষের জীবনকে হার মানায়।বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক , সমাজ কর্মী ও রাজনৈতিক কর্মী।
আজ তাঁর ১৪৩ তম জন্ম দিবস,সারা দেশ জুড়ে ঠিক তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠান। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে নদীয়াজেলা ব্লাইন্ড অ্যাসোসিয়েশন অধীনস্থ হেলেন কেলার স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে গতকাল হেলেন কেলারের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে, আলোচিত হয় তাঁর স্মৃতিকথা প্রতিভা এবং অসম্ভব মনোবলের নানান জীবনশৈলী।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাস্ এডুকেশন দপ্তর দ্বারা স্বীকৃত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ১২ জন, শিক্ষাকর্মী ১৩ জন, ছাত্রসংখ্যা ৯৯ জন যার মধ্যে দৃষ্টিহীনের সংখ্যা বেশি থাকলেও, এবং মূক বধিরের সংখ্যাও কম নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রত্যেককেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। চাকুরীরত প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী, শুভাকাঙ্ক্ষী সহৃদয় ব্যক্তিদের এবং বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের সামান্য সান্মানিক এবং আবাসিক ডে স্কলারদের পড়াশুনা, থাকা-খাওয়ার খরচ চলে কোনমতে। নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দৃষ্টিহীনদের ব্রেইল এবং মূক ও বধিরদের আকারে-ইঙ্গিতে পড়াশোনা করানো হয় রবিবার ব্যতিত প্রত্যহ সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সময়কালে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর রাইটারের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতকস্তরে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
তবে ব্রেইল পদ্ধতিতে নিজে পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা ভারতে কোথাও সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি স্বাধীনতার ৭৫ বছর বাদেও। ১৯৮২ সালে গড়ে ওঠা ব্লাইন্ড পারসন অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি গোবিন্দ বিহারী ব্যানার্জি, সম্পাদক সজল দেবনাথ অধ্যক্ষ স্বপন সরকার উপস্থিত ছিলেন জন্ম দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে। তাদের কাছ থেকেই শোনা গেল দীর্ঘ দুই বছর ধরে অনলাইনে পড়াশোনা এবং পরীক্ষার ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বিশেষ বিদ্যালয়। কারণ ব্রেইল পদ্ধতি কখনো অনলাইনে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না, আর্থিকভাবে সরকারি অনুদান প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। তবুও বিশেষভাবে সক্ষম দের পড়াশোনার কথা মাথায় রেখে, এই বিদ্যালয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে। কারণ সরকারি বিদ্যালয়ে সক্ষমদের বিশেষ নজর দেওয়ার ব্যবস্থা নেই, প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিশেষ চাহিদার সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা হাতে গোনা যায়।