সোশ্যাল বার্তা : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার অন্তর্গত অগ্রদ্বীপ একটি প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম। হাওড়া-কাটোয়া লোকালে অগ্রদ্বীপ স্টেশনে নেমে টোটো বা হেঁটে ভাগীরথীর তীরে এসে নৌঁকায় পার হয়ে অগ্রদ্বীপে পৌঁছনো যায়। এছাড়াও নদীয়ার বেথুয়াডহরী স্টেশনে নেমে টোটো বা অটোতে করে যাওয়া যায় বৈষ্ণবতীর্থ হিসেবে খ্যাত অগ্রদ্বীপ।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে এখানে মেলা বসে। মেলায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ লোকের সমাগম হয়। এই মেলাটি অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলা নামেও পরিচিত।
মূলত সাধক গোবিন্দ ঘোষ এবং তাঁর আরাধ্য গোপীনাথ কে নিয়েই এই মেলা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা । প্রায় ৭ দিন ধরে চলবে এই মেলা। অন্যান্যবারের তুলনায় এইবারে লোকসমাগম বেশি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই মেলাকে কেন্দ্র করে অগ্রদ্বীপের চারপাশে মিলনতীর্থের তৈরি হয়েছে। কমপক্ষে ৪০০ আঁখড়া তৈরি হয়েছে পুণ্যার্থীদের জন্য। কোথাও চলছে গান বাজনা আবার কোথাও চলছে পুণ্যার্থীদের খাবার পরিবেশন। নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা আখড়া তৈরি করে গান বাজনা ও খাবার পরিবেশন করছেন।
এলাকার এক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায় প্রায় ৫০০ বছর আগে অগ্রদ্বীপে ভক্ত গোবিন্দ ঘোষের কাছে এসেছিলেন ভক্তিবাদ আন্দোলনের নেতা শ্রীচৈতন্য দেব। এখানে শ্রীচৈতন্য দেব একটি কৃষ্ণের বিগ্রহ তৈরী করে তাঁর নাম দেন গোপীনাথ। গোপীনাথের সেবার ভার গোবিন্দ ঘোষের হাতে দেন।
চৈত্রের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে শ্রীচৈতন্যের একনিষ্ঠ ভক্ত গোবিন্দ ঘোষ মারা যান। সেই তিথিকে স্মরণে রাখতে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় গোবিন্দ ঘোষের পারলৌকিক বা চিড়ে মহোৎসব।
এখানে রয়েছে গোপীনাথের মন্দির। তবে পুরনো মন্দির এখন আর নেই যেটি ভাগীরথী নদীতে অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে।
গোপীনাথের বর্তমান মন্দিরের পাশেই রয়েছে গোবিন্দ ঘোষের সমাধিস্থল।
মূল মন্দিরের ডানদিকে রয়েছে যাত্রীনিবাস। মেলার সময় যাত্রীরা এসে থাকেন। শৌচাগার, পানীয়জলের ব্যবস্থা আছে। একটু দূরে কয়েকটি বাঁধানো চৌবাচ্চা রয়েছে। মহোৎসবের সময় রান্না করে এখানে ঢালা হয়। সামনে কীর্তন হয় তারও বেদী রয়েছে।
গ্রামের একজন অধিবাসী জানান ” আগে মেলায় রান্না হত মাটির হাঁড়িতে, খাবার বাখারি দিয়ে নাড়া হতো। খাবার পরিবেশন করা হতো নারকেল খোলের ওড়ং বানিয়ে, কলার পাতায় খাওয়ারও প্রচলন ছিল। উঁনুন বানানো হতো লম্বা করে এবং কাঠের জ্বালে রান্না করা হতো । বর্তমানে অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস এর ব্যবহার হচ্ছে। মাটি,কাঠ,বেত,বাঁশ দিয়ে যা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হয় ।
নদীয়ার করিমপুর থেকে আসা এক পুণ্যার্থী জানান,গত দুই বছর করোনার কারণে আসা হয়নি। গোপীনাথের কাছে প্রতিবছরই আসি। সবার মনোবাসনা পূর্ণ করুক গোপীনাথ এটাই চাই ।
ধীরে ধীরে মেলার রুপ বদলাচ্ছে । প্রচুর পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। চিৎকার, মাইকের আওয়াজে গ্রামীণ মেলার রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে ।
গতকাল মঙ্গলবার এতটাই ভিড় হয় যে সন্ধেবেলায় মেলা প্রাঙ্গণ থেকে মাঝেরগ্রাম সাত কিলোমিটার বাইকে করে ফিরতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা।
একসময় নদীয়ার কৃষ্ণনগরের বারোদোলের সময় অগ্রদ্বীপের এই গোপীনাথকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হত। বর্তমানে গ্রামবাসীরা আর গোপীনাথকে পাঠান না। বর্তমানে বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে । তবুও বলা চলে গ্রামীণ মেলার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ অগ্রদ্বীপের মেলা।