নদীয়ার শান্তিপুরে অনুষ্ঠিত হলো গণেশ জননী পূজা 

Social

মলয় দে নদীয়া:- বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। যাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। সাধারণত শারদীয়া দুর্গাপূজা কিংবা বাসন্তী দুর্গাপূজাতেই সপরিবার দুর্গার রূপ লক্ষ্য করে থাকি। বিভিন্ন রূপে দুর্গা আরাধনা হয়ে থাকে যার মধ্যে অন্যতম গণেশ জননী । মাঘী পূর্ণিমার পরই শান্তিপুরে গণেশ জননীর আরাধনা শুরু হয়, যা একটি ব্যতিক্রমী উৎসব বলেই বঙ্গদেশে পরিচিত। স্বামী ভোলানাথকে সঙ্গে নিয়ে গণেশ জননী উপস্থিত হন শান্তিপুরে। প্রতিবারের মতন এবারও ধুমধাম করে গণেশ জননীর আরাধনা শুরু হয়েছে শান্তিপুরে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই শান্তিপুর কেবলমাত্র মহাবিষ্ণু অবতার অদ্বৈতাচার্যের পুণ্যভূমি কিংবা তাঁতবস্ত্রের জন্যই বিখ্যাত নয়। এই শান্তিপুর শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি জগতে এক প্রসিদ্ধ স্থান। শাক্ত-শৈব এবং বৈষ্ণবধারার অভূতপূর্ব মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় এখানে। প্রসঙ্গত, দুর্গা পূজায় যেমন বাঙালিরা মেতে ওঠেন, ঠিক তেমনই শান্তিপুরে কাঁসারী পাড়া অঞ্চলের মানুষজন মেতে ওঠেন এই গণেশ জননী পুজোকে কেন্দ্র করে।উল্লেখ্য যে, এই গণেশ জননী পূজার সূত্রপাত শান্তিপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পরিচালিত অন্নপূর্ণা পুজোকে কেন্দ্র করেই। একসময় সাহা পরিবারের সদস্যরা অন্নপূর্ণা পুজোর দায়িত্বভার সুবর্ণ বণিক এবং কংস বণিকদের হাতে তুলে দেন। আর তাঁরা যৌথ উদ্যোগে পুজোর নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। প্রচলিত লোককথায়, আনুমানিক দেড়শো বছর আগে অন্নপূর্ণা পূজার সময় অনুষ্ঠিত এক যাত্রা পালাকে কেন্দ্র করে সুবর্ণ বণিক এবং কংস বণিক মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তাই অন্নপূর্ণা পুজোর তিনদিনের মাথায় কংস বণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুজো কমিটি থেকে বেরিয়ে এসে গণেশ জননীর পুজোর প্রচলন করেন।তৎকলীন কংসবণিক সম্প্রদায়ের নিমু দত্ত, ইন্দু দত্ত, মুরারী দত্ত প্রমুখের নেতৃত্বে এই পুজোর সূত্রপাত হয়। প্রসঙ্গত, মা অন্নপূর্ণার সঙ্গে গণেশ জননী বিগ্রহের বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। এখানেও দেবীর ডানপাশে মহাদেব এবং বামপাশে নারদের অবস্থান। আর গণেশ জননীর ক্ষেত্রে মায়ের কোলে গণেশ বসে রয়েছেন। মট পাঁচ দিন ধরে চলে মায়ের আরাধনা। যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গেই পুজো হয় গণেশ জননীর। থাকে পূজা প্রাঙ্গণে যথেষ্ট ভোগের আয়োজন এবং প্রায় পুজোর প্রত্যেক দিনেই কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া । শান্তিপুরের বাইরে থেকে শিল্পীরা এসে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন । তবে পুজোর শেষে লগ্নে অর্থাৎ মায়ের পুজোর শেষে গণেশ জননী মাতার কোলে বিরাজমান গণেশকে কোলে নেবার রীতি রয়েছে। যাঁরা নিঃসন্তান দম্পতি রয়েছেন, তাঁরা সন্তান লাভের জন্য পুজোর শেষে গণেশকে নিজের কোলে তুলে নেন। এছাড়া প্রতিমা বিসর্জনের দিন শান্তিপুরে নগর পরিক্রমা সঙ্গে আলোক সজ্জা এবং বাজনা সহ বিগ্রহকে বিসর্জন দেবার রীতি রয়েছে । এই উপলক্ষে গোটা কাঁসারি পাড়া জুড়ে, উৎসবের চেহারায় নয় যা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিপুরের বিভিন্ন প্রান্তে। দীর্ঘদিনের বিধায়ক এবং পৌরপতি অজয় দের ওই পাড়ার বাসিন্দা হওয়ার কারণে প্রতিবছর বিভিন্ন গুণীজনের আগমন ঘটতো।

Leave a Reply