বড়দিন উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে নদীয়ার কৃষ্ণনগরের ক্যাথলিক চার্চ 

Social

মলয় দে নদীয়া:- ২৫ শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়ো দিনের প্রাক মুহূর্তে নদীয়ার কৃষ্ণনগরের ক্যাথলিক চার্চের চতুর্দিকে সাজো সাজো রব । খ্রিস্ট মাস আগত মানেই নতুন ইংরেজি বর্ষ অর্থাৎ ২০২২ আমাদের দরজায় করা নাড়ছে । কিন্তু বড়দিন কি ? কেনো খ্রিস্টানরা এই দিনটিকে এত আড়ম্বরের সাথে পালন করেন ? কৌতূহল কিন্তু থেকেই যায় মানুষের মনে ।

বাইবেল অনুযায়ী যীশুর জন্ম তারিখের কোনো উল্লেখ নেই । কিছু ঐতিহাসিকদের মতে বেথলেহেম শহরে কুমারী মা মেরির কোলে জন্ম নিয়ে ছিলেন যীশু । যীশুকে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত বা ঈশ্বরের পুত্র বলে অভিহিত করা হয় । কারণ তার আবির্ভাব ঘটেছিল মানুষ ও ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা জাগাতে , হিংসা মুছে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হতে । তবে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর কয়েক শো বছর পর থেকে ২৫ ডিসেম্বর সারম্বরে পালন করা হয় । অনেক ঐহাসিকদের মতে যিশুর জন্মের আগে থেকে রোম দেশে খ্রিস্টান সম্রাটের আমলে প্রথম ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিকে পালন করা হতো ।

পরবর্তী কালে পোপ জুলিয়াস আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দিনটিকে যিশুর জন্ম দিন হিসাবে ঘোষণা করে । যদিও ইতিহাস সূত্রে জানা যায় রোম সাম্রাজ্যের শাসনকালে ইউরোপে সবচেয়ে বড়ো উৎসব ছিল তাঁদের কৃষি দেবতা ও শনি গ্রহের সম্মানে এক বিশেষ উৎসব । এই অনুষ্ঠানটি শীতকালের মাঝামাঝি ২৫ ডিসেম্বরে পালিত হতো । সেই সময় রোম সাম্রাজ্যের সমস্ত ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতো । এই অনুষ্ঠানে ধনী দরিদ্র , ছোটো বড়ো প্রত্যেকেই তারা ভেদাভেদ ভুলে মেতে উঠত । যদিও যীশুর অনুগামীরা এই অনুষ্ঠানকে তারা বিধর্মী অনুষ্ঠান বলে মনে করতো । যিশুর জন্মদিন সম্পর্কে তারা সকলেই অনিশ্চিত ছিলেন বলে তাঁরা পুনুরুথানের দিনের কাছাকাছি সময়কেই তার জন্মদিন হিসাবে পালন করতে শুরু করেন । ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে আরো জানা যায় , কুমারী মরীয়ম গর্ভবতী হবার দিন থেকে ৯ মাস হিসাবে ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন । ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে রোমান বর্ষপঞ্জিতে ২৫ শে ডিসেম্বর কে বড়দিনের উৎসব হিসাবে উদযাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে । রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্ম রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । ফলে বড়ো দিন তার প্রাণ ফিরে পায় । তবে নদিয়ার কৃষ্ণ নগর শহরে বড়ো দিনের উৎসবেকে কেন্দ্র করে যে মেলা বসে বিগত বছর করোনা প্রেক্ষাপটে কিছুটা ঝিমিয়ে গেলেও এবছর আবার তার গতি ফিরে পাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে । তবে হিন্দুদের দূর্গা পুজোর মতই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই উৎসবটি । এই সময় তারা কেক কেটে , একে অপরকে নতুন উপহার প্রদান করে , বাড়ি ঘর পরিচর্যা করে প্রভু যীশুকে স্মরণ করে । সনাতন ধর্মের ন্যায় মন্দিরের মতই চার্চ তাদের কাছে পবিত্র স্থান । এবছর ও প্রচুর ব্যাবসায়ী এই অঞ্চলে বিভিন্ন খাবারের স্টল থেকে শুরু করে দোকানের পসরা সাজাচ্ছেন ।

Leave a Reply