মলয় দে, নদীয়া:- মাজদিয়ার বাসিন্দা শ্যামল বিশ্বাস বিক্রি করতেন মনোহরি, আশান নগরের অঞ্জনা টিকাদার জিলিপি বিক্রেতা, উত্তম দফাদার ইমিটেশন, বলাগরের রূপচাঁদ বিক্রি করেন বাচ্চাদের খেলনা, এরকমই ফুচকা বিক্রেতা, হরেককমাল ১৫ টাকা, প্লাস্টিকের ফুল, ঘর সাজানোর টুকিটাকি সহ বিভিন্ন বিক্রেতাদের বাড়ি নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হলেও কোনো মেলায় সাত দিন, কখনোবা ১৫ দিন, এক হাঁড়িতে একসঙ্গে রাত্রি বাস!
দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক কারণে পরিচিত মানুষগুলো ঈদের প্রয়োজনের স্বার্থে সম্পর্কটাও হয়ে উঠেছিল পারিবারিক। গত লকডাউনে দীর্ঘদিন কর্মহীন! ব্যবসায়ী সমিতি, বিডিও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সকলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ক্লান্ত! পরিস্থিতির মধ্যেও ছেলে মেয়ে লেখাপড়া, সাংসারিক খরচ যোগাতে পুঁজির বেশ খানিকটা অংশ খরচ করে ফেলেছেন। অনেকেরই নেই ট্রেড লাইসেন্স, অ্যানড্রয়েড ফোনও! উত্তম দফাদার এঁদের মধ্যে পড়াশোনা জানা, গুগল সার্চ করে বিভিন্ন মেলার যোগাযোগ তিনি করেন! নিয়ে যান সকলকে ডেকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে মেলা করার আই কার্ড পেয়েছেন অনেকেই, কিন্তু মেলা কোথায়? দীর্ঘদিনের লকডাউন পরিস্থিতি থেকে স্বাভাবিক হওয়ার মধ্যেই আবারো আংশিক লকডাউন! গত হোলির সময় শেষবার সকলে এক জায়গায় মিলিত হয়েছিল হবিবপুর থেকে বলাগড়ের দিকে যেতে সাহেব ডাঙ্গা গ্রামে। এর আগে অবশ্য শান্তিপুরের সপ্তম এবং পঞ্চম দোলে বৃষ্টি বাদলের কারনে বেচাকেনা বন্ধ করে ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই।
উত্তমবাবু সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করেন, কোন সংস্থা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাথে করে সহকর্মীদেরও! কদিন আগেই তিনি লক্ষ্য করেন শান্তিপুরের একজন জলের মেশিন বিক্রেতা সূর্য প্রামানিক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে, জীবানু নাশক স্প্রে করা, কোভিড আক্রান্তদের বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া, পথের পাশের সারমেয়দের নিয়মিত খাবার দেওয়া, প্রান্তিকদের সহযোগিতা নানা ভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নাম্বার জোগাড় করে, ইতি জানান তাদের প্রায় ৩০ টি পরিবারকে সহযোগিতার জন্য। সূর্য বাবু দিন স্থির করেন আজ রবিবার। তাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানান শান্তিপুর ডাবরে পাড়ায় বারোয়ারি প্রাঙ্গণে। গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ তাই মেলায় কর্মহীন দোকানিরা কেউ সাইকেলে কেউবা ছোট ছোট দল করে মটরভ্যান ভাড়া করে এসে পৌঁছান।
সূর্য্য প্রামানিক, এবং তার প্রধান সহযোগী প্রশান্ত রায়, গোপাল টিকাদার , অপু রায়, রকি বিশ্বাস , আকাশ বিশ্বাসকে সাথে নিয়ে ঐ 30টি পরিবারের হাতে তুলে দিলেন, রান্নার যাবতীয় মসলা মুড়ি সাবান সরষের তেল সহ এক সপ্তাহের মুদি দোকানের বাজার এবং কিছু কাঁচা আনাজপাতি। এ বিষয়ে সূর্য বাবু জানান, লকডাউনের প্রথমদিকে উপার্জনের জন্য কেনা টোটো বিক্রি করেছিলাম ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে, ভেবেছিলাম এই টাকা দিয়ে জলের মেশিনের আরেকটি দোকান করবো প্রধান রাস্তার ধারে। কিন্তু কর্মহীন মানুষের আর্তনাদ , আক্রান্ত রোগীর পরিবারের দুরবস্থায় নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি , দুধের নিয়ে নেমে পড়লাম মানুষের পাশে থাকার জন্য। বন্ধু প্রশান্ত তার ঘর ছেড়ে দিলো, রান্না এবং কাজকর্মের জন্য। আকাশ পেশায় অটোচালক, বিনা পারিশ্রমিকে মানুষের কাজে নিয়োজিত আমার সাথে, অন্যরাও সকলে হাতে হাত মিলিয়ে নেবে পড়েছে। একদিকে বড় হচ্ছে চাহিদার তালিকা, অন্যদিকে তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসছেন বহু সাধারণ ছেলেমেয়েরা। দায়িত্ব বাড়ছে ক্রমশ। তাই এখন থেকে কিছু কিছু সহযোগিতা নেওয়া শুরু করেছি, তা অবশ্যই নগত অর্থ নিয়ে নয় ! প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে। বেঁচে থাকলে, ব্যবসা আবারো বড় হবে, এসময় প্রিয়জনদের হারাতে দেবো না, কোনোভাবেই।