দেবু সিংহ,মালদা: মহামারীর দ্বিতীয় কবলে দেশ আবার দিশেহারা।একদিকে করোনা সংক্রমণ,অপরদিকে লকডাউন।বেকারত্বের ছায়া গ্রাস করছে বহু পরিবারকে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পরিষেবার আশায় বসে আছে মানুষ। এই সময় এগিয়ে এসেছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ক্লাব। এরকম পরিস্থিতিতে এমনই এক নজির দেখা গেলো মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে। করোনাকালে কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া নানাভাবে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার নিজেদের ক্লাব ভবনে সেফ হোম চালু করল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর সংগঠন সমিতি।
বৃহস্পতিবার থেকে ওই সেফ হোম চালু করা হয়েছে। গত বছর করোনা আবহে হরিশ্চন্দ্রপুর আইটিআই কলেজে সেফ হোম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রকোপ কয়েকগুণ বাড়লেও এখনও তা নেই। ফলে সংক্রমিতদের অনেককেই বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাদের পাশাপাশি যাদের সামান্য উপসর্গ রয়েছে, তাদের কথা ভেবেই ক্লাব ঘরে সেফ হোম চালু করার পরিকল্পনা বলে ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠন সমিতির সম্পাদক অনুপ দাস, সুবীর রায় চৌধুরী,ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তারকেশ্বর রায়, সহ অন্যান্যরা।
জেলার অন্যতম পুরনো ও মহকুমার প্রথম এই ক্লাবের নাম হরিশ্চন্দ্রপুর সংগঠন সমিতি। ৯৯ বছরের পুরনো এই ক্লাবের আজীবন সদস্যদের তালিকায় বহু বিশিষ্টরাই রয়েছেন। একসময় সদস্যরা নিয়মিত নাটক করতেন বলে ক্লাব ভবনটিকে বড়সড় প্রেক্ষাগৃহের আকারে তৈরি করা হয়। ক্লাবের চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। করোনাকালে বিভিন্ন সময়ে তারা সংক্রমিতদের সমস্যা হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু সেফ হোমের সমস্যার কথা ভেবেই ক্লাব ভবনে তা চালু করতে উদ্যোগী হন কতৃপক্ষ। সংগঠন সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেফ হাউসে ২০ জন থাকতে পারবেন। সংক্রমিতদের খাবারের বন্দোবস্ত তারাই করবেন। পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, নিয়মিত দেখভালের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
সংগঠন সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তারকেশ্বর রায় বলেন,”মানুষের সুবিধার জন্য এই সেফ হোম খোলা হল।আপাতত দুটি বেড রয়েছে।ভবিষ্যতে কুড়িটি বেড করা হবে।খাওয়া-দাওয়া অক্সিজেন এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হবে।এইজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতাও চায়।”সঙ্গে তিনি বলেন,”এই মুহূর্তে আমাদের কাছে চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।আরো দশটি সিলিন্ডার কেনার কথা আমরা ভাবছি।কিন্তু মালদা জেলায় কোথাও পাচ্ছি না।এই ক্ষেত্রেও প্রশাসন আমাদের সাহায্য করলে সুবিধা হবে।”
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক ছোটন মন্ডল বলেন,”করোনা আক্রান্তদের আলাদা ভাবে আইসোলেট করে রাখা যাবে।এটা নিঃসন্দেহে খুব ভাল উদ্যোগ।আমরা আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য করবো।ওষুধপত্র পরামর্শ এবং ম্যানপাওয়ার যতটা দরকার।তবে অক্সিজেন ক্যাপাসিটি হাসপাতালের বাইরে দেওয়ার মত নেই।তাই আপাতত সেটা আমরা পারবো না। চাঁচলে ১০০ শয্যার একটি করোনা হাসপাতাল খোলা হয়েছে।সেখানেই আপাতত রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।তবে তুলনামূলক যাদের কম উপসর্গ থাকবে তাদের এই সেফ হোমে রাখা যাবে।হরিশ্চন্দ্রপুরে সরকারিভাবে বর্তমানে এরকম কোন আইসোলেশন সেন্টার নেই।গত বছর ছিল।খোলা হবে কিনা সেটা প্রশাসনের ব্যাপার।”
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে,”মানুষ মানুষের জন্য।”এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যেভাবে বিভিন্ন ক্লাব এবং সংগঠন মানুষের সেবায় এগিয়ে আসছে তাতে সেই প্রবাদ বাক্যেরই সার্থকতা পাওয়া যাচ্ছে।এই মানবিকতার পরিচয় রেখে সারা বাংলার চোখে এক অদ্ভুত নজির গড়লো।