প্রীতম ভট্টাচার্য,নদীয়া : ছোটোবেলায় খেলা থেকে ফেরার পথে কানে ভেসে আসে একটি ছেলে পড়ছে কাকের বাসায় ডিম পাড়ে কোকিল, কথাটা মনে গেঁথে যায় বছর ১৫ র ছেলেটির। তারপর ডিমের রহস্যভেদ করতে প্রথম সংগ্রহ ঘুঘুপাখির ডিম। ১০৫ রকমের ডিম তার সংগ্রহে। ঘুঘু,কাক,কোকিল, জলপিপি, ডাকপাখি, কোয়েল, পানকৌড়ি এমনকি কয়েকটি সাপের ডিমও আছে।
সংগ্রাহক অমরেশ মিত্র শিক্ষকতার পাশাপাশি এই ডিম সংগ্রহ করে নিজের বাড়িতেই তৈরী করেছেন একটি আস্ত সংগ্রহশালা। কৃষ্ণনগর রাজারচক পীড়তলায় তার এই সংগ্রহশালা। আমঘাটা হাইস্কুলে ৪২ বছর শিক্ষকতা করেন, বয়স এখন বিরাশি বছর। স্ত্রী আরতি মিত্র ও দুই কণ্যা আছে। পশ্চিমবঙ্গে তিনিই একমাত্র ডিম সংগ্রাহক। ডিম ছাড়াও ২৩২ রকমের ধান আছে তাঁর সংগ্রহে যার মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ রকমের ধানের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে।২৬ প্রজাতির পাথর,১৩৫ রকমের শামুখ, ফসিল, কোরাল আছে তাঁর কাছে। বিভিন্ন দেশের ষ্ট্যাম্প, ৪০০ রকমের পেন আছে, অষ্ট্রেলিয়ার হিরো,আমেরিকার পার্কার, গ্রেট ব্রিটেনের শেফার্ড, জাপানের পাইলট প্রায় প্রত্যেক দেশের পেন তার সংগ্রহে। এখনও পর্যন্ত কোনো সন্মান জোটিনি তাঁর।
তিনি বলেন জীবনে একটা আক্ষেপ পেঙ্গুইন আর এমু পাখির ডিম আমার সংগ্রহে নেই। স্ত্রী আরতি মিত্র বলেন এইরকম একজন সংগ্রাহকের সাথে থাকতে পেরে ওনার কাজে সহযোগিতা করতে পেরে আমি খুব খুশি। আগামীদিনে ওনার লেখা যদি একটি বই প্রকাশ করা যায় তাহলে আরো ভালো লাগবে ওনার কাজের সঠিক মুল্যায়ন হবে, অনেকে উপকৃত হবেন।
অমরেশ মিত্র বলেন যদি কোনো সংস্থা আমার এই সংগ্রহশালাটিকে আগামীদিনে দেখভাল করে তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। নাহলে শহরের আড়ালে থেকে এই সংগ্রহশালাটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।এখনও অনেকে তাদের জমিতে নতুন ধান হলে তাকে দিয়ে যান।
সরকারি কোনো সাহায্য তিনি পাননি। কৃষ্ণনগরে এরকম একটি সংগ্রহশালা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।শারিরীক অসুস্থতা থাকলেও এখনও নতুন কিছু সংগ্রহ করার নেশা প্রবল। আজকের প্রযুক্তির যুগে এরকম আজবনেশার জন্য অমরেশ মিত্রকে কুর্ণিশ, শত অমলেশবাবুরা বেঁচে থাক এই শহরের হৃদয়ে, বেঁচে থাক তাদের সংগ্রহ আগামী প্রজন্মের কাছে।