মলয় দে নদীয়া :- স্বাধীনতার তৎকালে অবিভক্ত নদীয়ার মহাকুমা ছিল পাঁচটি- কৃষ্ণনগর সদর মহাকুমা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও রানাঘাট রাডক্লিফের ম্যাপে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে নবদ্বীপ বাদে বাকি এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় নবদ্বীপকে নদিয়া জেলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এমনই ঘোষণা ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট রেডিওতে করা হয় এবং নদীয়া জেলা পূর্ব-পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে।
নদীয়া জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির কথা শুনে জেলার বেশিরভাগ ঘরে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। সে সময় নদীয়ার রানী ছিলেন জ্যোতির্ময়ী দেবী তিনি যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলিত হয়, আর স্লোগান দেওয়া হয়, নায়ে তাকবীর আল্লাহ হুয়াকবার। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান পাকিস্তান জিন্দাবাদ হিন্দুস্তান মুর্দাবাদ ।
এ সময় আন্দোলনকারী দলের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার কথা শুরু করেন । লর্ড মাউন্টব্যাটেন আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে ম্যাপ নির্দেশক স্যার সিড়িল র্যাড ক্লিককে ডেকে পাঠান এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। স্যার সিরিল র্যাড ক্লিক ম্যাপ খুলে দেখে বলেন , ভুল তারই হয়েছে। এই ম্যাপ অনুযায়ী নদীয়ার রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা ভারতে থাকার কথা । চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর মহকুমাকে নদীয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয় । কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহাকুমা নিয়ে গঠিত নদীয়ার নতুন সীমানা নির্ধারিত হয় শিকারপুর থেকে পলাশী। ১৭ই আগস্ট রেডিওতে ঘোষণা করা হয়, শান্তিপুর সহ কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহাকুমা নিয়ে নবগঠিত ভারত ভূখণ্ডেই থাকছে। সেই মোতাবেক ১৮ তারিখ সকাল দশটায় পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতে যুক্ত হয় রানাঘাট নদিয়া মহকুমা ।
এর পরেই ১৮ আগস্ট দিনটিকে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদযাপিত শুরু হয়। বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ নদীয়ার কৃষ্ণ গঞ্জের শিবনিবাস মন্দির প্রাঙ্গণে সমবেত হয় এই দিনটিকে উদযাপন করতে এবং তারপর থেকেই ১৫ ই আগস্ট এর পাশাপাশি ১৮ই আগস্ট নদীয়া জেলার শান্তিপুর কৃষ্ণগঞ্জ এর শিবনিবাস এবং আরো একাধিক জায়গায় পতাকা উত্তোলন করে ভারত ভুক্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৯১ সালে গড়ে ওঠে ১৮ই আগস্ট ভারতভূক্তি উদযাপন কমিটি। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অঞ্জন শুকুল , কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় প্রতিবছর সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে সীমান্ত বাহিনীদের নিয়ে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম নয়, সমগ্র কৃষ্ণগঞ্জ তো বটেই নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষজন সারাদিন ব্যাপী এই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।