মলয় দে নদীয়া :-শান্তিপুর শহরের বড় গোস্বামী পাড়ায় গড়ে ওঠা নদীয়ার একমাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞান বিদ্যালয়ে আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম, একুশে মার্চ মহাবিষুব দিনের ব্যাখ্যা শুনতে। সেখানে শিশু কিশোর মনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের আগ্রহ বাড়াতে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করা রাজীব বসু সপ্তাহে দুদিন, শিশুদের দিনের এবং রাতের আকাশ দেখিয়ে পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন বিষয় সরলীকরণ করার চেষ্টা করেন। কুসংস্কার মুক্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে ।
সেখানে গিয়ে জানা গেলো, ল্যাটিন শব্দ Equinox’ -এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘বিষুব’,যার অর্থ ‘সমান রাত্রি’ (Equi = equal, nox = night)। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যেদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি) হয়, সেই বিশেষ দিনটিকে বলা হয় ‘বিষুব’।
বার্ষিক গতির ফলে নিরক্ষরেখায় বা বিষুব রেখায় সূর্যের গমনকে বিষুব বলা হয়। সূর্য বছরে দুবার বিষুব রেখার উপর দিয়ে গমন করার ফলে প্রতিবছর দুটি বিষুব ঘটে, যথা: সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় জলবিষুব এবং সূর্যের উত্তরায়ণের সময় মহাবিষুব।
সৌরপাদ বিন্দুটি দক্ষিণ গোলার্ধ ছেড়ে উত্তর গোলার্ধে প্রবেশ করার সময় যখন এটি নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে তখন মহাবিষুব বিষুব ঘটে যার অন্য নাম মার্চ বিষুব তথা উত্তরাভিমুখী বিষুব; এটি মার্চ মাসের ২১ তারিখে ঘটে।
আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীর যে অংশ যখন সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, তখন সেখানে সূর্যের আলো পড়ে বলে, সেই অংশে হয় দিন এবং এর ঠিক বিপরীত অংশে সূর্যের আলো পড়ে না বলে তখন সেখানে হয় রাত্রি। পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলে এই দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে। সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে করতে পৃথিবী তার কক্ষপথের বিভিন্ন স্থানে 66|১/২°(সাড়ে ছয়ষট্টি ডিগ্রী) কোণে হেলে অবস্থান করে ।21 শে মার্চ ও 23 শে সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে বছরের ওই দুই দিন পৃথিবীর উভয় গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে। ফলে ছায়াবৃত্ত প্রত্যেক অক্ষরেখাকেই সমদ্বিখণ্ডিত করে। বাস্তবে সূর্যের কৌণিক আকার ও বায়ুমণ্ডলে আলোর প্রতিসরণের কারণে দিন-রাত একেবারে সমান সমান না হয়ে ১২ ঘণ্টার খুব কাছাকাছি হয় মাত্র।সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১শে মার্চ দিনটিতে পৃথিবী তার কক্ষের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে, ঐদিন মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মি ঠিক লম্বভাবে নিরক্ষরেখার ওপর পড়ে এবং উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। এর ফলে ঐদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময় উত্তর গােলার্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে বলে ২১শে মার্চের বিশেষ দিনটিকে মহাবিষুব বলা হয।
মহাবিষুব ও জলবিষুব উভয় বিষুবীয় দিনেই, সূর্য একেবারে পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যায়। অর্থাৎ এই দিন নিরক্ষরেখায় অবস্থানকারী ব্যক্তি একেবারে পূর্ব দিগন্তে সূর্যোদয় ও পশ্চিম দিগন্তে সূর্যাস্ত দেখবেন। কিন্তু বিষুবীয় দিন ব্যতীত অন্যান্য সময়ে নিরক্ষরেখা থেকে সূর্যের উদয় ও অস্ত কিছুটা উত্তরে অথবা দক্ষিণে পরিলক্ষিত হবে। বিষুবীয় দিনে পৃথিবীর অধিকাংশ অক্ষাংশে অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ঊষা ও গোধূলির ব্যবধান প্রায় ১২ ঘণ্টা হয় অর্থাৎ দিন ও রাত প্রায় সমান হয়।