আচার্য, চৈতন্য মহাপ্রভু সহ বহু ইতিহাস প্রসিদ্ধ নদীয়ার শান্তিপুরে সুরধুনী নদী বাঁচানোর দাবীতে দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পদযাত্রা

Social

মলয় দে নদীয়া :- শান্তিপুরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সুরধুনি বা সুরধনী নদী৷ সুরধুনী নদীর সাথে জড়িয়ে রয়েছেন শান্তিপুর নাথ- বৈষ্ণবকূলচূড়ামনি শ্রীশ্রীঅদ্বৈতাচার্য এবং স্বয়ং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু৷ তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত নদী আজ মৃত প্রায় অবস্থায়৷ অথচ এখনো বন্যার সময় গয়েশপুর, হিজুলি, বাগআঁচড়া, বাগদেবীপুর, শান্তিপুর শহরের ২নং ওয়ার্ড সহ বিস্তীর্ন অঞ্চল বন্যার কবল থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পায় এই নদীর জন্য৷ সহায়তা করে এলাকার কৃষি কাজে৷ প্রকৃতির কিডনী এবং মিস্টি জলের এই ভান্ডার আজ বিপন্ন৷ প্রকৃতি পরিবেশের স্বার্থে প্রায় ১৪কিমি ব্যাপী নদীটির নবদ্বীপের কাছে শান্তিপুরের গয়েশপুর অঞ্চল থেকে ঘোড়ালিয়ার কাছে মঠ পাড়ার মূল গঙ্গা পর্যন্ত অংশটিকে সংস্কারের দাবীতে আজ পরিবেশ ভাবনা মঞ্চের ডাকে এক পদযাত্রা আয়োজিত হয়।

পরিবেশ আন্দোলনকারীরা জানান ইতিমধ্যেই শান্তিপুর ব্লক প্রশাসন, নদীয়া জেলা প্রশাসন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েও নদী ভরাট বন্ধে সে অর্থে কোন কার্যকরী ভূমিকা এখনো নেওয়া হয়নি৷

তাই সুরধুনী বা সুরধনী নদীটির উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সংস্কার করে নদীর স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়ে আজকের এই পদযাত্রা। জেলা এবং অন্যান্য জেলার বিভিন্ন পরিবেশ আন্দোলনকারীরা আজ শামিল হন এই পদযাত্রায়, বেশ কিছু বিশেষভাবে সক্ষম টাইসাইকেল চালিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। গ্রাম শহরে পাড়ার মহিলারা, আন্দোলনকারীদের শ্রদ্ধা জানান শঙ্খ উলুধ্বনি প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে। বিভিন্ন স্থানে শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষেরা পথের মাঝে, আয়োজন করেন চা জল টিফিন সহ মধ্যাহ্ন ভোজেরও।

এই আন্দোলনে, নদীর প্রতিকৃতি হিসাবে একটি পুত্তলিকা মৃতদেহ মা হিসেবে বহন করে নিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তারা বার্তা দিতে চান এভাবেই মায়ের মৃত্যু হতে চলেছে যা রক্ষা করতে হবে সন্তানদের। দুই শতাধিক, শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষজন সমাজের নানান স্তর থেকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন আজ । তারা বলেন, বেশকিছু অসাধু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন তাদের ব্যক্তি স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রাস করে চলেছে, প্রশাসনিক উদাসীনতায়। পরিবেশ কর্মীদের প্রশ্ন, পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর, শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, এমনকি নদী সংলগ্ন বাবলা পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্যরা পর্যন্ত স্বাক্ষর সংগ্রহ করে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দেওয়ার পরেও প্রকাশ ও দিবালকে নদী ভরাটের কাজ চলছে। এর পেছনে কোন অশুভ শক্তি আছে, যার উদ্যোগে সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন, জনপ্রতিনিধিদের ইচ্ছা, পরিবেশ কর্মীদের আন্দোলনকেও উপেক্ষা করে অবৈধ নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রতিকী আন্দোলনের পর, প্রশাসন তৎপর না হলে আগামী দিন সাধারণ মানুষকে নিয়ে গণআন্দোলনে শামিল হবেন বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

Leave a Reply