মলয় দে নদীয়া :-আর পাঁচটা সাধারণ শনিবারের মতো, এ শনিবারেও কর্মব্যস্ততার ফলে সারা সপ্তাহে না করতে পারা কাজের লিস্ট, কর্তব্য দায়িত্বে র বিরাট ফর্দ নিয়ে কাটাছাটা চলছিল, নিজস্ব শখ পূরণের বহু কিছু চাপা রেখেই।
রাত তখন দশটা হবে, হঠাৎই মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ “আগামীকাল সকাল দশটায় স্কুলে আসবি কিন্তু” দু ‘একটি প্রশ্নবোধক শব্দের মাধ্যমে জানা গেলো, কুড়ি পঁচিশ ত্রিশ বছর আগের মিউনিসিপাল স্কুলের পাঁচটা বছর কাটিয়ে আসা ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি। প্রচন্ড দুষ্টুমি নিয়মিত সাজা প্রাপক বন্ধুরা অন্য আর পাঁচজনের মতো ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন ছিল না ঠিকই কিন্তু শান্তিপুর কে বুকে আগলে রেখে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করে চলেছে। এমন কি নিউক্লিয়ার সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকা প্রত্যেক বন্ধু দের মেসেজ ফোন করা, স্কুলের আয়োজন, প্যান্ডেল, মাইক, টিফিন চা ব্যবস্থা করা সবটাই করেছে ওরা। ক্যারিয়ার নিয়ে নাভাবা আবেগি বন্ধুরা ঠিক আগেও স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন ওরাই করত!
আজ রবিবার সকাল দশটায় রবিবারের অতিরিক্ত কাজের বোঝা ফেলে রেখে সোজা দৌড় স্কুলে। প্রার্থনা লাইনে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত। তারপরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, ঠিক 30 বছর আগের বন্ধুদের সকলে হাজির! অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা, ব্যবসায় রমরমা ধনীদের মধ্যে নামকরা বন্ধুটিও বুকে জড়িয়ে ধরলো আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া তাঁত বোনা, অথবা বাড়ির সামনে অগত্যা মুদি দোকান খুলে ফেলা বন্ধুটিকে। এর আগেও বেশ কয়েকবার কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কথা হলেও আজকের মতন আন্তরিকতায় ভরা ছিল না। অনেকেই বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব সামলাতেরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতেন, তাদেরকে অবশ্যই খবর দেয়া হয় এক সপ্তাহ আগে, যারা খুব অসুবিধায় পৌঁছতে পারলেন না তারাও সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে মজা করলেন দূরে বসেই। কেউবা একই ব্যাচ থেকে পাশ করা একজন শিক্ষক অন্যজন এক ছাত্রের অভিভাবক, বিদ্যালয় শুধুই মুচকি হাসি, সৌজন্যবোধ
কিন্তু আজ! সমস্ত সৌজন্যতা ফেলে শুধুই আন্তরিকতা ভালোবাসার ভরা নিখাদ ভালোবাসার বন্ধুত্ব, স্মৃতিচারণ ছেলেবেলার। একসঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মতো আনন্দ পাশাপাশি খেতে বসে সমস্ত বন্ধুরা।
কেউবা প্রশাসনিক কাজে খুবই রাশভারি, অফিস-আদালতে গেলে অমুকবাবু তমকবাবু বলতে হয়, অথচ ছাত্রঅবস্থায় বাবু বলা লোকটি মনিটর হিসেবে পরিচালনা করতেন বর্তমান সববাবুদের।
এক টেবিলে ১৯৬৪ সালের ব্যাচের পাশেই ১৯৮৬ সালের ব্যাচ, আবার তারই খুব কাছে ২০১৭ সালের বন্ধুদের পাশাপাশি আড্ডা মারতে দেখে, হতবাক হলেন সকলে
দাদু বাবা এবং নাতি এক অনুষ্ঠানেই পাশাপাশি।
সারাদিন এভাবেই প্রতিটি ব্যাচের মেলবন্ধন ঘটল আজ শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়য়ে। শুধু আবেগ নয়, বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা, আগামীর পরিকল্পনা, আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের পাশে থাকা, বিদ্যালয় কে বিভিন্ন দিক থেকে গগনচুম্বী খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিতে সকলেই বদ্ধপরিকর। উঠে এল নানা অভাবনীয় পরিকল্পনা। গত বছর শুরু হয়েছিল এই প্রাক্তনী সমাজের মেলবন্ধন অনুষ্ঠান। এক বছরের মধ্যেই অন্য আর পাঁচটি স্কুলের কাছে দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেছে মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয়। আমন্ত্রিত ছিলেন তৎকালীন শিক্ষক বৃন্দ, যাদের মধ্যে অনেকেই পরলোক গমন করেছেন আলোচিত হলো তাদের স্মৃতিকথা। সকলেরই বাকী ৩৬৪ দিন বাঁচার অণুপ্রেরণা আজকের প্রাক্তনী সমাজের মেলবন্ধন।