ধুঁকছে ডাকের শিল্প, সংকটে পটাশপুরের ডাকের সাজের শিল্পীরা

Social

মদন মাইতি, পটাশপুর: প্রতিবছরই রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় মায়ের ডাকের গহনা। এই ডাকের সাজের গহনার সঙ্গে বরাবরই সুনাম রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের ঝুরিয়া গ্রামে। পূজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলেও দ্রবমূলের বাজারে ঝিমিয়ে রয়েছে এই শিল্প। কোন মতে সংকটে চলছে কাজ। দ্রব্যমূল্যের বাজারে প্রবল অনটনে ডাকের সাজের শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। তবু অভাবকে সঙ্গী করে মায়ের গহনা তৈরি করে চলেছেন ওঁরা।

পূরান কথা অনুযায়ী হিমালয় কন্যা পার্বতী সঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেবের বিয়ে চূড়ান্ত। বিয়েতে সাদা মুকুট পরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মহাদেব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার ওপর সেই মুকুট তৈরির ভার পড়ল। মহাদেবের ইচ্ছায় তৈরি হলো এক ধরনের নরম উদ্ভিদ। পৃথিবীতে সৃষ্টি হলো শোলা গাছের। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল অন্য জায়গায়।শোলার মত নরম হালকা সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত নন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। সেই সমস্যার কথা তিনি জানালেন দেবাদিদেবকে। তখন মহাদেবের ইচ্ছায় জলাশয়ে এক সুকুমার যুবকের আবির্ভাব ঘটল।মালাকার হিসেবে পরিচিতি পেলেন সেই যুবক। তৈরি হলো মহাদেবের শোলার মুকুট। তার থেকেই বিস্তার হয় মালাকার সম্প্রদায়। মা মন্ডপে অধিষ্ঠিত হন। গোটা মন্ডপ ঝলমল করে ডাকের সাজে।

এই ডাকের সাজ কথাটার পেছেনেও একটা গল্প আছে। পলাশির যুদ্ধের পর থেকে কলকাতায় বনেদী বাড়ি গুলিতে বাড়তে থাকে দুর্গোপূজার কালচার। পূজো ঘিরে আত্মিক যোগ ছিল ইউরোপের সঙ্গে। প্রতিমার সাজ আসতো জার্মানি থেকে। ডাক মারফত সৈই সাজ আসতো বলে বলা হতো ডাকের সাজ।

আজও মালাইকার পরিবার দেবীর এই গহনা তৈরি করে আসছেন মহা নিষ্ঠার সঙ্গে। দুবছর মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে এবার আবার ছন্দে দুর্গোপুজো। তারপরেও পুজো এবার বিশ্বজনীন। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই মালাকারদের। লাভ লোকসান গায়ে লাগে না। মাকে সাজানোটাই এক মাত্র নেশা।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নং ব্লকের ঝুরিয়া গ্রামের জয়দেব গিরি একজন শোলা শিল্পী। সারাবছর এই ডাকের শিল্পর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ভালোবাসা থেকেই করেন। কিন্তু লাভের ঘরটা শূন্যই থাকে। রকেট গতিতে বাড়ছে আঠা, চুমকি, শোলার দাম।

শোলা শিল্পী জয়দেব গিরি বলেন, “আমি বহুকাল ধরে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সারা বছর এই শোলার গহনা তৈরি করে আমার সংসার চলে। দুবছরের করোনার কারনে তেমন বিক্রি নেই। এবছর করোনার প্রভাব কমলেও কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কিন্তু পূজো কমিটি গুলো তেমন দাম দিতে নারাজ।কিভাবে এই ব্যবসা ধরে রাখবো। কীভাবে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছেন না কিছুতেই।”

কাজ দেখে দেখে সঙ্গ দিচ্ছেন বাড়ির বাকিরাও। ঘরের কাজ সামলে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মাতেন পরিবারের মহিলা থেকে ছোটোরাও ।

দ্রব মূলের বৃদ্ধির বাজারে ভালো নেই শিল্পিরা। জিনিস পত্রের দাম যেভাবে হুহু করে বাড়ছে সেভাবে লাভ হচ্ছে না। অনেকটাই মলিন হয়ে গিয়েছে তাদের মুখের হাঁসি। মায়ের অলঙ্কার তৈরির গর্বটাই আলাদা। টাকা পয়সা এখানে নিমিত্ত মাত্র। কিন্তু সংসারটাতো চালাতে হবে। একটাই আবেদন সরকার মুখ তুলে তাকাক। তাহলে যদি কোনভাবে বাঁচানো যায় এই প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া শিল্পটাকে।

Leave a Reply