অঞ্জন শুকুল, নদীয়া: নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া স্টেশনে গিরিধর বিশ্বাসের ব্যতিক্রমী চায়ের দোকান । এই চায়ের দোকানে চা খেতে আসলে অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে । স্বাধীন ভারতবর্ষের ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীদের কার্যকালের সময় ও নাম পাওয়া যাবে ।তেমনি পাওয়া যায় কুইজ প্রতিযোগিতা । একথা শুনে অবাক হলেন তো ? অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা । বাস্তবে চায়ের দোকানটা যেন রাজনৈতিক ডিকশনারি।সাধারণত আমরা চায়ের দোকানে সিনেমা জগতের বিভিন্ন নায়ক-নায়িকাদের ছবি দেখে অভ্যস্ত সেখানে গিরিবাবু বাতিঞমী ,অন্য মানসিকতার মানুষ ।
তিনি বলেন অনেক ছাত্র-ছাত্রী , চাকুরিজীবী , শিক্ষক ছাড়াও সব ধরণের মানুষ আসেন আমার চায়ের দোকানে। যারা আসেন তারা ছোট্ট দোকান থেকে কিছুনা কিছু শিক্ষা নিয়ে যান ।সবাই এই কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন ।
এখন প্রশ্ন কে এই গিরিবাবু? গ্রামের বাড়িতে বাস করতেন, মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার ছিল তাদের । হঠাৎ একদিন ডাকাতি হয়ে গেল বাড়িতে । প্রচন্ড মারধোর করে ডাকাতদল ।সর্বস্ব নিয়ে যায় ডাকাতরা । মারাত্মক যখম অবস্থায় ভর্তি হন কলকাতার নীলরতন মেডিকেল হাসপাতালে । আর ছোট বেলা থেকেই গিরি বাবুর চায়ের নেশা ছিল । এই অসুস্থ অবস্থায়ও কলকাতায় পয়সার অভাবে এক দিন কোন দোকানদার তাকে চা খেতে দেননি ।
সেই দিনের সেই ঘটনার পর তিনি মনেমনে প্রতিজ্ঞা করেন সুস্থ হয়ে একটা আদর্শ চায়ের দোকান করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ আজ তার চায়ের দোকান ২৩ বছরে পড়লো । যেসমস্ত
ভিখারী ,গরিব ও অসহায় মানুষ পয়সার অভাবে চা কিনতে পারেন না তাদের কে তিনি বিনাপয়সায় চা খাওয়ান ।
নদীয়ার মাজদিয়া স্টেশন আলোকিত করে রয়েছে গিরি বাবুর চায়ের দোকান । করোনা আবহে যখন চায়ের দোকান বন্ধ ছিল তখনও গিরি বাবু বাড়ি থেকে চা নিয়ে এসে অসহায় মানুষদের খাইয়েছেন ।
কথা বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে গিরি বাবুর । সেদিনের চা খেতে না পাওয়া গিরি বাবু তার দোকানে সারা ভারতকে হাজির করেছেন ।
তাইতো ছাত্র ছাত্রীরা ভারত চায়ের দোকান দেখতে উৎসুক হয়ে খাতায় নোট করে নিয়ে যায় ,যা ওদের কাজে লাগে । গিরিবাবু বলেন
অনেক কষ্ট করে মনীষীদের ও মন্ত্রীদের ছবি আমার চায়ের দোকানে লাগাতে পেরে
আমি মানসিক ভাবে খুশি। গিরি বাবুর এই উদ্যোগ কে সকলেই স্বাগত জানান ।