শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ রুখতে নিজের একরত্তি কন্যাকে লক্ষী রূপে আরাধনা করলেন নদীয়ার বাগচী দম্পতি

Social

মলয় দে নদীয়া :- শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ রোধ করতে নিজের সাড়ে চার বছরের কন্যাকে লক্ষী রূপে পূজা করে অভিনব উপায়ে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানালেন নদিয়ার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ থানার নাঘাটা পাড়া এলাকার বাসিন্দা অর্জুন বাগচীর পরিবার।

লক্ষ্মী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে সারা বিশ্ব যখন ধন-সম্পদ লাভের আশায় লক্ষ্মী মাতার আরাধনায় ব্রতী হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের সাড়ে চার বছর বয়সী এক রত্তি শিশু কন্যাকে লক্ষ্মী মাতার আদলে সজ্জিত করে ধর্মীয় রীতি মেনে তাঁকে পূজা করে পৃথিবী থেকে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের মতো অসামাজিক ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য মা লক্ষ্মীর কাছে কাছে প্রার্থনা জানালেন বাগচী দম্পতি। নাঘাটা এলাকার বাগচী পরিবারের ঠাকুর ঘরের সিংহাসনে মা লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি রয়েছে। তার সামনেই এই দিন নিজের শিশু কন্যা অরিত্রিকা বাগচীকে মা লক্ষ্মীর আদলে সজ্জিত করে পুরোহিত ডেকে নিজের কন্যাকে মাতৃরূপে পূজা করলেন অর্জুন বাগচীর পরিবারের সদস্যরা।

এই প্রসঙ্গে পরিবারকর্তা অর্জুন বাগচির স্ত্রী ঝুমা বাগচী বলেন, মেয়ে সন্তানকে পরিবারের লক্ষ্মী হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও নারীকে মাতৃ শক্তির আধার রূপে মানা হয় । মূলত সেই কারণেই মা লক্ষ্মীর মৃন্ময়ী মূর্তির বদলে ঘরের মেয়েকেই তাঁরা লক্ষ্মী মাতার রূপে আরাধনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের মেয়েকে ভগবান রুপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের মত অমানবিক ঘটনা চিরতরের জন্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। মেয়ের জন্মের পর থেকে তাদের পরিবারের উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার বহু জায়গায় বাস্তব জীবনে মেয়েদের পিছন সারিতে ফেলে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় কিছু সংখ্যক মানুষজনদের মধ্যে। কন্যা সন্তানদের প্রতি তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা ও অসামাজিক মনোভাবকে মুছে দিতেই নিজের কন্যা সন্তানকে মাতৃরূপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে নারীদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তাঁরা বলে জানান শিশু কন্যা অরিত্রিকা বাগচীর বাবা অর্জুন বাগচী। আর পাঁচটা পরিবারের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পালনের মতোই এই দিন নিজের কন্যা অরিত্রিকাকে মা লক্ষী রূপে সাজিয়ে পুরোহিত ডেকে মা লক্ষীর আরাধনা করতে দেখা গেল কৃষ্ণগঞ্জের নাঘাটা এলাকার বাগচী দম্পতিকে। এলাকার বিশিষ্ট পুরোহিত তারক আচার্য বলেন মেয়েরা মায়ের সমান । মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করাটা বিধিসম্মত । তিনি বলেন সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে প্রত্যেক পরিবারের উচিত মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পূজা করা । কারণ এই মেয়ে একদিন বড় হয়ে অন্য ঘরে যাবে । পুরোহিত পুরুষের দৃঢ় বিশ্বাস মেয়েকে যদি লক্ষীরূপে রাখা যায় পরের ঘরে কেউ সে সংসারকে আলোকিত করবে । দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কুমারী পূজার প্রচলন থাকলেও কোন শিশু কন্যাকে লক্ষ্মী রূপে আরাধনা করার ঘটনা এখনো পর্যন্ত নজিরবিহীন। বাগচী দম্পতির এই কর্মকাণ্ডকে স্বচক্ষে দেখতে নাঘাটার বাগচী বাড়িতে এইদিন ভিড় জমান আশেপাশের প্রতিবেশীরা। এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Leave a Reply